ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জকে অন্ধকারে রাখছে প্রতারক কোম্পানি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২২ ১১:১৬:২৯
বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জকে অন্ধকারে রাখছে প্রতারক কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাম্প্রতিক সময়ে এক ধরনের ‘সুনির্দিষ্ট কৌশল’ ব্যবহার করে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত বাড়তে দেখা গেছে। মাত্র দুই সপ্তাহ থেকে দুই মাসের মধ্যে কিছু শেয়ারের দাম দ্বিগুণও হয়েছে। মূলত কিছু কোম্পানি সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীরা মিলে অবৈধভাবে শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে লাভ করছে। এতে তারা ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

অনেক বিনিয়োগকারী মাত্র কয়েক মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন, আর বিপরীতে কোটি কোটি টাকার লোকসান সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের চোখে ধুলো দিয়ে নিয়মিত প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। তারা তথ্য গোপন করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বাড়িয়ে অবৈধ সুবিধা নিচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরাও শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছেন। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছু কোম্পানি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এসব কাজ করছে। তারা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কিছু বিশেষ বিনিয়োগকারীর কাছে আগেই পৌঁছে দেয়, যারা প্রথমে কম দামে শেয়ার কিনে নেয়। এরপর ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে এই তথ্য পৌঁছে যায়, ফলে শেয়ারের দর হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। এই কৃত্রিম দরবৃদ্ধি স্থায়ী হয় না, যার ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়। কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরাও নিজের মালিকানার অংশ বিক্রি করে সুযোগ নিতে পারে।

গোপন তথ্যের আড়ালে দাম বেড়েছে যেসব শেয়ার

কে অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ) লিমিটেড: মাত্র দুই মাসের মধ্যে শেয়ারের দর ৯৩% বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ৮ জুলাই শেয়ার লেনদেন হয় ১৯৯ টাকায়, আর ১ সেপ্টেম্বর ৩৮২ টাকা ৭০ পয়সা। ডিএসই-র জবাবে কোম্পানি জানিয়েছিল, ‘অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির কারণ জানে না’। তবে দুই মাসের মধ্যেই জানায়, তারা নতুন ইউনিট চালু করেছে যা এলপিজি সরবরাহ করবে এবং মুনাফা বাড়বে।

সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড: ২৯ জুলাই থেকে শেয়ারের দাম ৯৭% বেড়ে ১৫২ টাকা থেকে ২৯৯ টাকা ৮০ পয়সা হয়েছে। ডিএসই-এর চিঠিতে জানিয়েছিল, ‘কারণ জানি না’। পরে জানায়, তারা নতুন উৎপাদন ইউনিট চালু করবে।

মাগুরা কমপ্লেক্স পিএলসি: ১৭ কার্যদিবসে শেয়ারের দর প্রায় ৩১% বেড়েছে। ২৯ জুলাই ৮৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে ২৪ আগস্ট ১১৪ টাকা। ডিএসই-র চিঠিতে ‘অজ্ঞাত’ কারণ জানায়, পরে জানায় নতুন মেশিনারিজ কিনবে।

মনোস্পুল বাংলাদেশ পিএলসি: ২৯ জুলাই থেকে শেয়ারের দর ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিএসই-র জবাবে জানিয়েছে ‘অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির কারণ জানি না’, পরে জানায় উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে মেশিনারিজ কিনবে।

মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড:মাত্র ১৩ কার্যদিবসে শেয়ারের দাম ৩২% বেড়েছে, ২৪ আগস্ট ২৭ টাকা থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ৩৫ টাকা ৭০ পয়সা। ডিএসই-কে জানায় ‘কারণ জানি না’। তবে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) তাদের থেকে ৫০% ব্যাগ ক্রয়ের কথা নিশ্চিত করেছে, যা মুনাফা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও সক্রিয় ও কড়া হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, “মূল্য সংবেদনশীল তথ্য থাকলেও যদি কোম্পানি তা গোপন করে, তাহলে সেটি প্রতারণা। আমাদের দেশে কোম্পানির জবাবদিহিতা এখনও কম। যথাযথ গাইডলাইন ও কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব।”

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “স্টক এক্সচেঞ্জের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে, যা কোম্পানির প্রতারণাকে চিহ্নিত করতে বাধা দেয়। স্টক এক্সচেঞ্জকে আরও সক্ষম হতে হবে।”

বিএসইসি মুখপাত্র মো. আবুল কালাম জানান, “ইনসাইডার ট্রেডিং নিষিদ্ধ এবং প্রমাণিত হলে কড়া জরিমানা করা হবে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।”

ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, “কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের নির্দিষ্ট সময় আছে, এর আগে প্রকাশ নিষিদ্ধ। ইনসাইডার ট্রেডিং থাকলে তা তদন্ত করা হবে। আমাদের সার্ভিলেন্স ক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে।”

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে