ঢাকা, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে 'এক্সিট' প্রবণতা: ৪৫ হাজার বিও হিসাব শেয়ারশূন্য

২০২৫ জুন ১৩ ১২:১৪:১১
শেয়ারবাজারে 'এক্সিট' প্রবণতা: ৪৫ হাজার বিও হিসাব শেয়ারশূন্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে চলমান মন্দা, সিংভাগ কোম্পানির অস্বাভাবিক দরপতন এবং প্রত্যাশিত রিটার্ন না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর হতাশা তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বিও হিসাবেও। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৪৫ হাজার ৩৬৯টি বিও হিসাব শেয়ারশূন্য হয়ে পড়েছে—যার মানে, এসব অ্যাকাউন্টে আর কোনো শেয়ার নেই।

শেয়ারশূন্য হিসাব বাড়ছে, কমছে শেয়ারধারী

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এর তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারিতে শেয়ারশূন্য বিও হিসাব ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৭টি। ৪ জুন শেষে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৬টিতে। বিপরীতে, শেয়ারধারী বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৪০ হাজার ৩৮১টি।

বছরের শুরুতে দেশে শেয়ারধারী বিও হিসাব ছিল ১২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৯টি, যা জুনে নেমে এসেছে ১২ লাখ ৩১ হাজার ১৬৮টিতে—বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতারই স্পষ্ট প্রমাণ।

নতুন হিসাব বাড়লেও আস্থার ঘাটতি স্পষ্ট

এদিকে সামান্য হলেও বেড়েছে মোট বিও হিসাবের সংখ্যা—১৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৩৪টি থেকে বেড়ে ১৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৯৭টিতে দাঁড়িয়েছে। এতে বোঝা যায়, কিছু নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে প্রবেশ করলেও তারা এখনো নিঃসন্দেহে শেয়ার কেনার সাহস দেখাচ্ছেন না। ভবিষ্যতের জন্য হয়তো প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বাজারে পুরুষ বিও হিসাবধারী বেড়েছে ৬ হাজার ৫০৭ জন, নারীদের সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ২৫৬ জন। প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা উল্টো ৩০৫টি কমে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৩৮৬টিতে।

সূচকের পতন, লেনদেনে ধীরগতি

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স জানুয়ারিতে ছিল ৫,২১৮ পয়েন্ট। জুনে এসে তা নেমেছে ৪,৭০৯ পয়েন্টে—মোট কমেছে ৫০৯ পয়েন্ট। একই সময়ে দৈনিক লেনদেন সর্বোচ্চ ৬০৭ কোটি এবং সর্বনিম্ন ২২৪ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

বাজার বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

বিশ্লেষকদের মতে, একের পর এক কোম্পানির দরপতন, আয় ও মুনাফা কমা এবং অর্থনীতির চাপ—সব মিলিয়ে বাজারে অনিশ্চয়তা চরমে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা আরও ঝুঁকি এড়াতে হয়তো তাদের শেয়ার বিক্রি করে চলেছেন।

বাজেটের প্রণোদনায় আশার আলো?

শেয়ারবাজারে চলমান মন্দাবস্থা কাটিয়ে উঠতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে যে প্রণোদনামূলক পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছে, তা অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আস্থা ফিরবে, বাজারে তারল্য ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে এবং দীর্ঘমেয়াদে বাজার আরও স্থিতিশীল হবে।

এই প্রণোদনাগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো কর্পোরেট করের ব্যবধান বৃদ্ধি, সিকিউরিটিজ ট্রেডিংয়ে অগ্রিম আয়কর হ্রাস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলির কর হার কমানো। এই ধরনের সুচিন্তিত পদক্ষেপগুলো বাজারের প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন। এটি কেবল তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য বিনিয়োগ আকর্ষণ সহজ করবে না, বরং সামগ্রিকভাবে বাজারের গতিশীলতা ও দক্ষতাকে বাড়িয়ে তুলবে। এই পদক্ষেপগুলো শেয়ারবাজারের ভিত্তি আরও মজবুত করবে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্থিতিশীল ও লাভজনক পরিবেশ তৈরি করবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে