ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হারাতে পারেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা

২০২৪ নভেম্বর ২২ ২১:১৬:৫৮
বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হারাতে পারেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীগণ তাদের প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হারাতে চলেছেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা হবে না, বরং শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানায় নতুন উদ্যোক্তারা আসবেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে এই কার্যক্রম শুরু করেছে। যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, সেগুলো ফেরত আনার জন্য উচ্চ আদালতের অনুমোদনও পাওয়া গেছে।

ইতোমধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাভেদের দেশ- বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলমের সম্পদ জব্দের বিষয়েও।

অন্যদিকে, বেক্সিমকো গ্রুপেরও প্রতিবেদন তৈরির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ২০টি বড় গ্রুপের মালিকানা পরিবর্তন করা হতে পারে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীরা দেশ থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। এর মধ্যে এস আলম একাই পাচার করেছেন ১০ বিলিয়ন ডলার।

দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ বের করে নিয়েছে ব্যাংকিং খাতের অভিশাপ এস আলম গ্রুপ। তারা দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিশেষ করে ২০১৭ সালের পরে দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো আচমকা দখল করে নেয়। এরপর থেকে সেই ব্যাংকগুলো থেকে পানির মতো করে জনগণের আমানতের অর্থ বের করে পাচার করে নিয়ে যায়।

সামিট গ্রুপের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। বিতর্কিত নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

তেমনিভাবে বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধেও অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে, শুধু চারটি ব্যাংক থেকেই নিয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকার ওপরে। তাদের হিসাব এখন চূড়ান্ত করা হয়নি। চূড়ান্ত হিসাবে কয়েক লাখ কোটি টাকা হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বেক্সিমকো গ্রুপ প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে। নাসা গ্রুপ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।

তেমনিভাবে সামিট, মেঘনা, বসুন্ধরাসহ বেশ কয়েকটি গ্রুপের ওপর বিশেষ তদারকি কাজ শুরু হয়েছে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাভেদের যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে তিন শতাধিক বাড়ির সন্ধান মিলেছে। ২০টি বড় গ্রুপের ব্যাপারে বিশেষ অনুসন্ধানী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কারো কারো তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

এদিকে, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে দেশী বিদেশী সংস্থার তৎপরতা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের কিছু ব্যাংক থেকে জনগণের আমানতের অর্থ নজিরবিহীনভাবে সরিয়ে নিয়ে পাচার করার ঘটনা বিশ্বে বিরল। আর এসব ঘটনা সরেজমিন উদঘাটন করার অভিজ্ঞতা বিশ্বের অন্যান্য দেশে কাজে লাগাতে চাচ্ছে বিশ্বের অনেক সংস্থা।

এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকে অনেক সংস্থা তথ্য উদঘাটন থেকে শুরু করে অর্থ উদ্ধারে কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচিতিপত্র সরবরাহ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসেছিলেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিনিধিরা গত সপ্তাহে বাংলাদেশে এসেছেন।

সূত্র জানায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানেরই যুক্তরাষ্ট্রে তিন শতাধিক বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে দখলে নেয়া আটটি ব্যাংক থেকে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকেই হাতিয়ে নিয়েছে এক লাখ কোটি টাকার উপরে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২০টি বড় গ্রুপের অর্থপাচারের বিষয়ে তদন্তকার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্তকার্যক্রম শেষ হয়ে অর্থ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এস আলমের অর্থ পাচারের ঘটনা উদঘাটনের কাজ শেষ হয়েছে।

এস আলমের দেশি-বিদেশি সম্পদ বাজেয়াপ্তের অনুমোদন নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাকি ১৮টি প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের তথ্য উদঘাটনের কাজ চলছে পর্যায়ক্রমে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো রীতিমতো হতবাক। তাদের অনেকেই বাংলাদেশে অর্থ পাচারের ঘটনা উদঘাটনের কাজে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন।

তারিক/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে