ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

নির্বাচনের বছরে ভোটারদের কেন মন-মেজাজ খারাপ?

২০২৪ জুন ১২ ১১:২৯:০৪
নির্বাচনের বছরে ভোটারদের কেন মন-মেজাজ খারাপ?

ডেস্ক রিপোর্ট : নির্বাচনের বছরে দেশে দেশে মানুষের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। আলোচনা মূল কেন্দ্রে উঠে এসেছে শাসন শ্রেণির সঙ্গে জনতার ক্রমাগত ব্যবধান। তাদের অভিযোগ, রাজনীতিবিদরা এখন আর জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন না। তারা নিজেদের স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।

পূর্ব লন্ডনের এক কমিউনিটি সেন্টারে প্রায় ২০ জন পুরুষ তাদের নিয়মিত লাঞ্চ টাইম আড্ডায় মিলিত হয়। কফি এবং চায়ের মগ থেকে চুমুক দিয়ে তারা বিশ্বের গণতন্ত্রে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় একটি কথোপকথনে লিপ্ত হয়, তাদের সরকার সম্পর্কে অভিযোগ। তারা দেশের নেতৃত্ব থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন বোধ করছে। এর প্রধান কারণ, দেশের ধনী প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের মধ্যে দূরুত্ব তৈরি।

লন্ডনে বসবাসকারী ৬৫ বছর বয়সী ব্যারি স্ট্র্যাডলিং বলেন, ‘এটা এমন যে মনে হবে আপনারা দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ। আমাদের সংসদ সদস্যরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন না। রাজনৈতিক নেতারা বুঝতে পারছেন না আমরা কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তারা কি মানুষের কথা জানতে চান? আমার তো মনে হয় না তারা তা করে।’

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার একটি কফি শপে ৪৬ বছর বয়সী নি ওয়ায়ান সুরিয়াতিনি সম্প্রতি হয়ে যাওয়া নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। নির্বাচনে ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্টের ছেলে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন এবং এটা রোধ করেতে বিরোধী দলগুলো তেমন একটা চেষ্টা করেছে বলে মনে হয়নি।

সুরেয়াতিনি রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে বলেন, ‘তাদের বিশ্বাস করা কঠিন। কারণ তারা কেবলমাত্র তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়। যতক্ষণ না তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন ততক্ষণ তারা অন্য সবকিছু ভুলে যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো রাজ্যের গ্রিলিতে পরিপাট্যহীন একটি কারুপণ্যের দোকানের মালিক স্যালি অটো প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ভয়ে আছেন।

৫৮ বছর বয়সী অটো বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে ফিরে এসেছি। দু’জনই একরকম, প্রার্থী নির্বাচন ভালো হয়নি।’

বিশ্বব্যাপী ভোটের উৎসব

চলতি বছর সারাবিশ্বে এক রকম ভোটের উৎসব শুরু হয়েছে। এই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ ভোট দিচ্ছে এবং ভোটাদের মেজাজ একেবারে খারাপ। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আর্জেন্টিনা, একের পর এক নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারবিষয়ক বিভাগের অধ্যাপক স্টিভেন লেভিটস্কির হিসাব অনুযায়ী, গত সপ্তাহান্তে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কেবল ল্যাটিন আমেরিকাতেই নেতারা ও তাদের দলগুলো টানা ২০টি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে।

ওয়াশিংটন ডিসির কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের সিনিয়র ফেলো ম্যাথিয়াস ম্যাথিজ বলেন, ‘অনেক দিক থেকেই আমরা আগে কখন এত ভালো ছিলাম না। কিন্তু তারপরও মানুষ অন্ত্যন্ত অসন্তুষ্ট।’

রাজনীতির বিরুদ্ধে মনোভাব

সম্প্রতি ২৪টি গণতান্ত্রিক দেশে পিউ-এর জরিপে দেখা গেছে, ৭৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে তারা মনে করেন না যে রাজনীতিবিদরা তাদের মতো লোকেরা কী ভাবছেন তা নিয়ে তারা চিন্তা করেন এবং ৪২ শতাংশ বলেছেন যে কোনো রাজনৈতিক দল তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে না।

পিউ’স গ্লোবাল এটিচিউডস রিসার্চের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড উইক বলেন, ‘এটা অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বিষয়, তবে এটি রাজনীতির কার্যকারিতা সম্পর্কিতও। এটা এমন এক পরিস্থিতির দিকে রাজনীতিকে নিয়ে যেতে পারে যখন দু’পক্ষই মনে করে অপরের ক্ষতি মানে নিজের লাভ। মানুষ প্রতিপক্ষর তরফ থেকে জীবন-মরণ হুমকি দেখতে পায়, যা মানুষকে গণতন্ত্র সম্পর্কে অসন্তুষ্ট করে তোল।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী নির্বাচিত নেতাদের নিয়ে ক্ষোভের যে প্রবণতা, তার একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম আছে। যেসব দেশে নেতারা অ্যান্টি-এস্টাবলিশম্যান্ট বা প্রতিষ্ঠানবিরোধী, জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী।

ল্যাটিন আমেরিকায় ধারা ভঙ্গ

বামপন্থী রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডরের হাতে বাছাই করা উত্তরসূরি হিসাবে রোববার মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্লডিয়া শেইনবাউম জিতেছেন। ফলে লাতিন আমেরিকায় ক্ষমতাসীন নেতাদের দলগুলোর পরাজয় বাধাগ্রস্ত হয়।

আর্জেন্টিনায় নব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জাভিয়ের মিলেই, একজন স্ব-ঘোষিত 'নৈরাজ্য-পুঁজিবাদী' এবং ভক্তদের দ্বারা 'ম্যাডম্যান' নামে ডাকা হয়, তার কঠোরতা এবং নিয়ন্ত্রণমুক্ত সংস্কারের পরে দেশের অব্যাহত অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও জনপ্রিয় রয়ে গেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সমালোচিত হয়েছেন। তবে পিউ জরিপে দেখা গেছে, যেসব দেশে জরীপ করা হয়েছে, তার মধ্যে ভারতে আরো বেশি কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন সবচেয়ে বেশি। সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা একটি শক্তিশালী নেতাকে সমর্থন করেছেন।

‘ফ্রিডম ইন্ডেক্স’ নিম্নমুখী

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক সংগঠন ফ্রিডম হাউস যারা গণতন্ত্রকে উৎসাহিত করে থাকে তারা বলছে, তাদের ‘ফ্রিডম ইনডেক্স’ অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি টানা ১৮ বছর ধরে নিম্নগামী।

ফ্রিডম হাউসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আদ্রিয়ান শাহবাজ এই সমর্থন কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ‘সন্ত্রাসী’ হামলা, ২০০৮-০৯ সালের বৈশ্বিক মন্দা এবং করোনাভাইরাস মহামারীসহ শতাব্দীর শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক সঙ্কটকে দায়ী করেন।

আদ্রিয়ান শাহবাজ আরো বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে, বিশেষত ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ট্রান্সজেন্ডার নীতি এবং অভিবাসনের মতো ইস্যুতে ক্রমান্বয়ে মনোযোগ বাড়ার ফলে এই চাপকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

শাহবাজ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সমাজে মূল ফাটলগুলো অর্থনৈতিক বিষয়ের চেয়েও আইডেন্টি বা জেন্ডার বা ব্যক্তি-পরিচয় ইস্যুকে ঘিরে রয়েছে। কেবল এটাই খুব ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে কারণ গণতন্ত্র একটি নাগরিক পরিচয়ের ওপর নির্ভর করে যা ট্রাইবাল বা সম্প্রদায়ভিত্তিক পরিচয়ের চাইতেও অনেক গভীর।’সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা

শেয়ারনিউজ. ১২ জুন ২০২৪

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে