ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসনের শিরোনামে বাংলাদেশিরা

২০২৩ ডিসেম্বর ২৬ ১৩:১০:১১
ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসনের শিরোনামে বাংলাদেশিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসনের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরেই শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। যে কারণে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রায়ই শিরোনামে উঠে আসে বাংলাদেশ। স্বাচ্ছন্দ জীবনের আশায় বাংলাদেশি তরুণদের ইউরোপ যাত্রায় নানা দুর্ভোগের চিত্র সেসব সংবাদে স্থান পায়।

ভূমধ্যসাগর, বলকান কিংবা ইরান-তুরস্ক হয়ে বাংলাদেশিদের ইউরোপমুখী যাত্রা ২০২৩ সালেও অব্যাহত ছিল। অনেকে কাঙ্ক্ষিত দেশে পৌঁছালেও আটক, ডিপোর্টের শিকারও হয়েছেন অনেকে। ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও।

ভূমধ্যসাগর পাড়িতে ৪র্থ

২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভূমধ্যসগার পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেছেন বিভিন্ন দেশের প্রায় এক লাখ ৫৩ হাজার অভিবাসী। শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে আছেন বাংলাদেশিরা।

ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মোট ১২ হাজার ১০০ জন বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগরের বিপদ সংকুল পথ পেরিয়ে ইতালিতে আসতে সক্ষম হন।

রোমানিয়ায় আটক ও ডিপোর্ট

রোমানিয়ায় আসার পর অনিয়মিত উপায়ে দেশটির সীমান্ত পাড়ি দিয়ে শেঙ্গেনভুক্ত দেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন অনেক অভিবাসী। গত মাসের ১২ তারিখে (১২ নভেম্বর) একটি মালবাহী লরিতে লুকিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় ২৪ বাংলাদেশিকে আটক করে রোমানিয়া পুলিশ। সংবাদটিতে দুর্দশার নানা চিত্র উঠে আসে।

এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে এমন আটকদের অনেককে পরবর্তীতে ডিপোর্ট বা দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটি। শুধু জুলাইতেই ৫১ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

রোমানিয়ার জেনারেল ইনস্পেক্টরেট ফর ইমিগ্রেশনের (আইজিআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে ইউরোপের দেশটিতে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন বিভিন্ন দেশের পাঁচ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থী। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৯৯ জন ছিলেন বাংলাদেশি।

লিবিয়া থেকে প্রত্যাবাসন

ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালিতে পৌঁছাতে না পেরে অভিবাসীদের বড় একটি অংশ যাত্রা করেন লিবিয়ায়। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে এসে তারা নানা নির্যাতনের শিকার হন। মানবপাচারকারীদের নিষ্ঠুরতা ছাড়াও দেশটির বন্দিকেন্দ্রগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো।

লিবিয়ায় আটক হওয়া বাংলাদেশিদের চলতি বছর ফেরাতে শুরু করেছে সরকার। ০৫ ডিসেম্বর এমন ২৬৩ জন অনিয়মিত বাংলাদেশি নাগরিককে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করা হয়। ২৮ নভেম্বর একই প্রক্রিয়ায় ত্রিপোলির আইনজেরা ডিটেনশন সেন্টারে আটক ১৪৩ জন অনিয়মিত বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত আনা হয়। ৩০ নভেম্বর আনা হয়েছে ১১০ জনকে।

চলতি বছরের মার্চে প্রকাশিত আইওএম এর হিসাব বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ২১ হাজার ৬৫৩ জন বাংলাদেশি লিবিয়ায় ছিলেন। সে বছর চার হাজার ৪৪৮ বাংলাদেশিকে সমুদ্রযাত্রায় বাধা দেওয়া হয়। দুই হাজার বাংলাদেশি দেশটির বিভিন্ন আটককেন্দ্রে বন্দি ছিলেন।

অব্যাহত ছিল মৃত্যুযাত্রাও

ইউরোপে পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশিদের বহু মৃত্যু যন্ত্রণাও সহ্য করতে হয়েছে। ২০২২ সালে ইতালি পৌঁছাতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ঠান্ডায় সাত বাংলাদেশির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালেও ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টায় বাংলাদেশিদের মৃত্যুর খবর ছিল গণমাধ্যমে।

আগস্টে গ্রিস থেকে ফ্রান্সে যাওয়ার সময় বাংলাদেশি যুবক তাপস সরকার প্রাণ হারান। তীব্র গরমের মাঝে আলবেনিয়া সীমান্ত থেকে উঁচু পাহাড় বেয়ে মন্টিনিগ্রো প্রবেশের সময় পাহাড়ের মাঝে লুটে পড়েন তাপস। তার মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে দালালসহ অন্যরা তাকে রেখেই চলে যান। ভিডিও পাঠিয়ে স্বজনদের কাছে ঘটনাটি জানান তার সাথে থাকা দুই বন্ধু।

বছরের শুরুতে ইরান থেকে তুরস্ক যাওয়ার পথে সীমান্তে মৃত্যুবরণ করেন তানিল নামের আরেক বাংলাদেশি তরুণ। পরিবারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ইরানে গিয়ে স্থায়ী চাকরি পেতে ব্যর্থ হয়ে বন্ধুরাসহ গ্রিসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হয় বলে খবর পান তারা।

এই দুইজনের মৃত্যুর খবর পরিবারের কাছে পৌঁছালেও অনেকের ক্ষেত্রেও তা-ও সম্ভব হয় না। কারণ সমুদ্রে মৃত্যুবরণকারী বা নিখোঁজদের পরিচয় বেশিরভাগক্ষেত্রেই জানা যায় না।

গ্রিসে বাংলাদেশিদের মুখে হাসি

গ্রিস অনিয়মিত বাংলাদেশিদের চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দেয়। এই আবেদনের শেষ সময় ছিল ৩০ নভেম্বর। এর মাধ্যমে পাঁচ বছর মেয়াদি গ্রিক রেসিডেন্স পারমিটের সুযোগ দেয়ে গ্রিক কর্তৃপক্ষ।

গ্রিসে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া দ্রুত করা এবং নিয়মিত অভিবাসনের দরজা খুলে দিতে ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই দেশের সরকার। তার ধারাবাহিকতায় নিয়মিতকরণের এই উদ্যোগ নিয়েছে এথেন্স।

২ অক্টোবর বাংলাদেশ দূতাবাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক নিবন্ধনকারীদের সংখ্যা ছিল ১০ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে অন্তত ছয় হাজার দ্বিতীয় ধাপ শেষে গ্রিক কর্তৃপক্ষ থেকে বৈধতার সত্যয়ন পেয়েছেন।

শেয়ারনিউজ, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে