ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি আরও জটিল করছে ৬ ব্যাংক

২০২৩ নভেম্বর ২৫ ২১:০৩:৫৬
ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি আরও জটিল করছে ৬ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত নয় মাসে দেশের ৬ বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। এটি ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ন্যাশনাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক (বিসিবি), পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ি, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে (সেপ্টেম্বর শেষে) ৪৩টি বেসরকারি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ৩৪.২৫ শতাংশ ছিল এই ছয় ব্যাংকের।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ছয় ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি সবচেয়ে বেশি। এটি ছয় হাজার ৬৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৫১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মেহমুদ হোসেন এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, `মাত্র নয় মাসে খেলাপি দ্বিগুণ হওয়ার জন্য ঋণ শ্রেণিবিন্যাসের ম্যানুয়াল পদ্ধতি থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চলে আসাকে দায়ী করা হয়েছে।`

তিনি আরও বলেন, `সম্প্রতি আমরা খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশ আদায় করেছি। তাই বছরের শেষ প্রান্তিকে আমাদের খেলাপির পরিমাণ কম হবে।`

প্রায় ৪০ বছরের পুরোনো এই ব্যাংকটির বিতরণ করা মোট ঋণের ৩২ শতাংশ খেলাপি। এর পাশাপাশি ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রভিশনিং ঘাটতি ও তারল্য সংকটেও ভুগছে ব্যাংকটি।

তারল্য ঘাটতির জন্য সরকারি আমানত কমে যাওয়াকে দায়ী করে মোহাম্মদ মেহমুদ হোসেন বলেন, `আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আরও সময় দরকার।`

এদিকে, প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক এবি ব্যাংকের গত নয় মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৮.৬০ শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ৯৪১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের (বিসিবি) খেলাপি ঋণ ৩৮.৮০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৭৪ কোটি টাকায়।

বিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী তাজুল ইসলাম বলেন, `বিসিবির বিতরণ করা মোট ঋণের ৬০ শতাংশ খেলাপি।`

সম্প্রতি বিসিবির ঋণ পুনরুদ্ধারের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, `কাগজে-কলমে আমাদের খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। তবে বাস্তবে তা খুব বেশি নয়।` খেলাপি ঋণের উচ্চহারের কারণে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৫৪২ কোটি টাকা।

গত বছর আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া ওয়ান ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বর শেষে ২১.৮০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৪১ কোটি টাকায়।

এই বিষয়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনজুর মফিজ বলেন, `আমরা এখন নতুন ঋণ বিতরণের চেয়ে ঋণ পুনরুদ্ধারের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি।` তিনি বলেন, `বাজারে তারল্য পরিস্থিতি ভালো না থাকায় এখন নতুন করে ঋণ দিচ্ছি না।`

বিলুপ্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাংক থেকে জন্ম নেওয়া আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ৬৮৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এটি গত বছর শেষে ছিল ৬৮৬ কোটি ১০ লাখ টাকা।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ শফিক বিন আবদুল্লাহ বলেন, `যে ঋণ ওরিয়েন্টাল ব্যাংক বিতরণ করেছে তা আমাদের নয়।`

গত নয় মাসে পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সাত দশমিক তিন শতাংশ বেড়ে তিন হাজার ৬৭২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা হলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটি ছিল ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ দশমিক সাত শতাংশ।

পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী তারেক রিয়াজ খান স্বীকার করেছেন যে ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে পদ্মা ব্যাংক তাদের নথিতে ঋণের প্রকৃত পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

`কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অডিটের পর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়,` উল্লেখ করে তিনি বলেন, `রাতারাতি খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব হবে না। তবে এর পরিমাণ কমাতে আমরা নানান আইনি উদ্যোগ নিচ্ছি।`

তিনি জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশ কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে পদ্মা ব্যাংক।

শেয়ারনিউজ, ২৫ নভেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে