ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

যে কারণে রপ্তানি আয়ের শতভাগ অর্থ দেশে আসে না

২০২৩ অক্টোবর ১৬ ০৭:২৬:০৯
যে কারণে রপ্তানি আয়ের শতভাগ অর্থ দেশে আসে না

নিজস্ব প্রতিবেদক : তৈরি পোশাক রপ্তানির শতভাগ আয় কেন সময়মতো দেশে আসছে না। এর কারণ জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিরা।

রোববার পোশাক খাতের রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান তারা।

জবাবে বিজিএমইএ নেতারা বলেছেন, রপ্তানি আয় বিদেশে রাখার সুযোগ নেই। করোনাকালে অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়েছে। তারা অর্থ দেয়নি। কোনো কোনো ক্রেতা ‘ডেফার্ড পেমেন্ট’ বা দেরিতে মূল্য পরিশোধ করেছে। এসব যুক্তিসংগত কারণে কিছু অর্থ সময়মতো দেশে ফেরত আসেনি।

বিজিএমইএর জবাবে আশ্বস্ত হয়েছেন আইএমএফের প্রতিনিধিরা।

রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইএমএফের নেতৃত্ব দেন সংস্থার মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দ। বিজিএমইএর নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান।

সভায় আইএমএফের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব ছাড়াও পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন তিনি। সংগঠনের পরিচালক আসিফ আশরাফ, নীলা হোসনে আরা, শ্রম ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আ ন ম সাইফুদ্দিন ও বিদেশি মিশন সেলের চেয়ারম্যান শামস মাহমুদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের মধ্যে পোশাক খাতে রপ্তানি আয় পরিস্থিতি কী, আগামীতে কেমন হতে পারে– মূলত এসব জানতেই বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা।

বিশ্ববাজারে চাহিদা সংকুচিত হয়ে আসার বাস্তবতায় রপ্তানি খাতের সামর্থ্য বোঝারও চেষ্টা করেছেন তারা। আর মাত্র তিন বছর পর ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণ হবে বাংলাদেশের। তখন থেকে শুল্কমুক্ত বেশির ভাগ বড় বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে না। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিল্পের টিকে থাকার কৌশল জানতে চেয়েছেন আইএমইএফের প্রতিনিধিরা।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, সময়মতো রপ্তানির অর্থ দেশে প্রত্যাবাসিত না হওয়ার কারণ জানতে আইএমএফের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের জবাবে একাধিক কারণের কথা বলা হয়েছে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে।

সংগঠনের নেতাদের বলেছেন, করোনাকালে অনেক ক্রেতা পণ্য হাতে পাওয়ার পরও মূল্যছাড়ে রপ্তানিকারকদের বাধ্য করেছেন। জাহাজীকরণের পরও অনেকে নতুন করে দাম নিয়ে দরকষাকষি করেছেন। পণ্য উৎপাদিত হওয়ার পর রপ্তানি আদেশ বাতিল করেছেন কেউ কেউ।

এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, এক্সপোর্ট মনিটরিং সিস্টেমে (ইএক্সপি) উল্লিখিত মূল্যের ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রত্যাবসিত না হওয়ার সুযোগ রয়েছে। রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের আগে কোন পণ্য কোথায় রপ্তানি করা হচ্ছে, সে বিষয়ে ইএক্সপি ফরমের মাধ্যমে ঘোষণা দিতে হয় রপ্তানিকারকদের। ক্রেতাদের কাছে অনাদায়ী অর্থ আদায়ে আইএমএফের সহযোগিতা চেয়েছেন বিজিএমইএর নেতারা।

বৈঠকের বিষয়ে আ ন ম সাইফুদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বৈঠকে আইএমএফের প্রতিনিধিরা বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বেশি। রিজার্ভ সংকটের মধ্যে ডলারের প্রধান উৎস পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম আরও মসৃণ করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তারাও আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

নীলা হোসনে আরা জানান, বিজিএমইএর সঙ্গে আলোচনায় অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা। পোশাকের ন্যায্য দর এবং ক্রেতাদের একটি কোড অব কন্ডাক্টের বিষয়ে আইএমএফের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, রপ্তানি প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে কোনো সমস্যা হলে তার মাশুল গুনতে হয়। অথচ ক্রেতাদের যেন কোনো ধরনের জবাবদিহি নেই। শ্রমিকদের কোনো দায়দায়িত্ব ক্রেতাপক্ষ নেয় না। মজুরি বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। শ্রমিকদের প্রতি অংশীদারিত্বের প্রশ্নে পণ্যের ন্যায্য দর যেন দেন ক্রেতারা– সে বিষয়ে আইএমএফের সহযোগিতা চেয়েছে বিজিএমই।

গত ২ অক্টোবর ব্যাংকগুলোকে দেওয়া চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানিকারকদের তাদের সম্পূর্ণ রপ্তানিমূল্য ৩১ অক্টোবরের মধ্যে দেশে আনতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূল্য প্রত্যাবাসনে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিয়ম অনুযায়ী, পণ্য রপ্তানি হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে অর্থ দেশে আনতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, বিভিন্ন সময় রপ্তানি হয়েছে, এমন প্রায় ১০০ কোটি ডলারের আয় দেশে আসেনি।

এ ছাড়া মাস দুয়েক আগে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক অনুসন্ধানে রপ্তানির আড়ালে প্রায় ৩ কোটি ৬৬ লাখ ডলার পাচারের তথ্য পাওয়া যায়।

শেয়ারনিউজ, ১৬ অক্টোবর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে