ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ডিএসইর নতুন এমডি

শেয়ারবাজারে আস্থা বৃদ্ধি, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, কারসাজি প্রতিরোধে দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা

২০২৩ সেপ্টেম্বর ১৮ ০৬:৪৯:৩১
শেয়ারবাজারে আস্থা বৃদ্ধি, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, কারসাজি প্রতিরোধে দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা বোর্ডের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে পূর্ববর্তী এমডির পদত্যাগের পর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পদটি শূন্য ছিল। দীর্ঘ এক বছর পর ডিএসই নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ করেছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা এটিএম তারিকুজ্জামান পরবর্তী তিন বছরের জন্য রোববার ডিএসইর এমডি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

একটি দৈনিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই আমলা শেয়ারবাজারে আস্থা বাড়ানো, স্মার্ট প্রযুক্তি প্রবর্তন এবং কারসাজি প্রতিরোধ, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং বাজারে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে নজরদারি জোরদার করার তার পরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছেন।

শেয়ারবাজার সম্প্রসারণ ও প্রাণবন্তকরণ

ডিএসইর নতুন এমডি তারিকুজ্জামানের লক্ষ্য বিএসইসি এবং ডিএসইর যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি প্রাণবন্ত ও ক্রমবর্ধমান শেয়ারবাজার গড়ে তোলা। স্টক এক্সচেঞ্জটিকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নয়নে জোর দেওয়া হবে তাঁর অন্যতম লক্ষ্য।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারকে স্বচ্ছ ও ন্যায্য করা, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং সুশৃঙ্খলভাবে বাজার পরিচালনা করা হবে তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। যেখানে বিএসইসি এবং ডিএসইর অভিন্ন লক্ষ্য ও স্বার্থ জড়িত।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা

শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিত হলেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে বলে মনে করেন এটিএম তারিকুজ্জামান। দেশে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি আরও উন্নতি করার বিশাল সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশের শেয়ারবাজারে সুশাসনের অভাব রয়েছে। যার কারণে অনেক বড় সুনিয়ন্ত্রিত শেয়ারবাজারেও সংকট তৈরি হয়েছে। ২০০৭ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের কারণে উন্নত দেশগুলোর শেয়ারবাজারে নানা সংকট দেখা দিয়েছে। তাই শেয়ারবাজারে আস্থার সমস্যা একটি সাধারণ বিষয়। এখানে আরও কাজ করতে হবে। আস্থা বৃদ্ধিতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

কারসাজি বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ

বাজারে কেউ যাতে প্রতারিত না হয় এবং সবাই যাতে সুষ্ঠুভাবে লেনদেন করতে পারে সে জন্য বিএসইসি এবং ডিএসই উভয়ই যৌথভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, স্থিতিশীল বাজারের জন্য কারসাজি বন্ধে নজরদারি জোরদার করা হবে। কারসাজি বন্ধে সুশাসন জোরদার করা হবে। কারণ কারসাজি যেমন বাজারে সুশাসন নষ্ট করে, বাজারকে অস্থিতিশীল করেও তোলে। এজন্য নজরদারি ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হবে।

বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার অভাব দূর

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তারিকুজ্জামান মনে করেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান সমস্যা বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার অভাব যা অবিশ্বাস তৈরি করছে। তাই বিনিয়োগকারী, স্টেকহোল্ডার এবং বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়লে বাজারের প্রতিও আস্থা বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

আইপিওতে ভালো কোম্পানি আনা

অনেক ভালো দেশি-বিদেশি কোম্পানি তাদের ব্যবসা ভালো করেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। এর কারণ তালিকাভুক্তির মাধ্যমে কী কী সুবিধা পাওয়া যায় সে বিষয়ে কোম্পানিগুলোর জ্ঞান না থাকার কারণে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি কোম্পানিগুলোর দীর্ঘ মেয়াদে মূলধন বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে। তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ায়। কোম্পানিগুলোকে এসব সুবিধা সম্পর্কে সচেতন করা গেলে বড় বড় বহুজাতিক ও সরকারি কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসবে। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোর ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা চালু করতেশেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে কর্মশালার মতো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

মধ্যস্থতাকারীদের স্বচ্ছতাবৃদ্ধি

মধ্যস্থতাকারী, ডিলার বা স্ট্রেকহোল্ডারদের মধ্যে সুশাসন নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই জায়গাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে মধ্যস্থতাকারীরা কারসাজি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি বলেন, ট্রেকহোল্ডারদের রেকর্ড রাখার ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত হওয়া উচিত যে ব্রোকারেজ হাউসে তাদের অর্থ এবং শেয়ার অক্ষত রয়েছে। সে জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে পরিবর্তন আনা খুবই প্রয়োজন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর সাথে সঙ্গতি রেখে বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের রেকর্ড রাখাও স্মার্ট করা হবে যাতে বিনিয়োগকারী তার নিজের বিনিয়োগ অ্যাক্সেস করতে পারে এবং প্রতারিত না হয়। এর জন্য প্রয়োজন হবে উন্নত সফটওয়্যার যা বিদেশেও পাওয়া যায়।

এটিএম তারিকুজ্জামান একটি স্মার্ট এবং সমন্বিত সিস্টেম তৈরি করতে চান। অনলাইন পেমেন্ট এবং সেটেলমেন্ট স্কিমগুলিও ব্যাঙ্কগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চান। যাতে শেয়ারবাজারের সংশ্লিষ্ট সকলের আস্থা, আগ্রহ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।

প্রযুক্তিগতব্যবস্থার উন্নয়ন

দেশের শেয়ারবাজারে উন্নত আইটি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। যা শেয়ারবাজারে সময়ের দাবি। ডিএসই’র আইটি সিস্টেম এখনও বিক্রেতা-নির্ভর। এখন সময় এসেছে ডিএসইর নিজস্ব ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা। তবেই প্রযুক্তিগত ত্রুটি কমানো সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, উন্নত প্রযুক্তি স্থাপন করা হলে বাজার স্বচ্ছ হবে এবং সুষ্ঠু ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষাও নিশ্চিত হবে। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বোধ করলে বাজার প্রাণবন্ত হবে।

এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, বিক্রেতা-নির্ভর সিস্টেমের বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে। সিস্টেমের সাথে কোন সমস্যার জন্য, আমাদের বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করতে হয় এবং তাদের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করতে হয়। এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের নিজস্ব সফ্টওয়্যার দরকার যা আমরা নিজেরাই চালাতে পারবো।

শেয়ারনিউজ, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে