ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

রাজনীতিতে ডিম ছোড়ার রোমাঞ্চকর সত্য

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৩ ১২:৫৭:৩৩
রাজনীতিতে ডিম ছোড়ার রোমাঞ্চকর সত্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : ডিম—খাওয়ার টেবিলের সাধারণ একটি খাবার। কিন্তু রাজনৈতিক বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদের মঞ্চে বহুবার এটি প্রতীকী অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে নানা কারণেই জনগণ ও বিক্ষোভকারীরা রাজনীতিবিদ বা জনসাধারণের দিকে ডিম নিক্ষেপ করে থাকেন। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও ডিম নিক্ষেপের ঘটনা দেখা গেছে।

বিপক্ষ নেতাকর্মীদের ওপর কিংবা আদালত প্রাঙ্গনে আসামিদের দিকে ডিম নিক্ষেপের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। যদিও এটি নতুন ঘটনা নয় — এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ও বৈচিত্র্যময় ইতিহাস।

ঐতিহাসিক সূত্রে বলা হয়, মধ্যযুগে বন্দীর বিরুদ্ধে ডিম নিক্ষেপ করে শাস্তি প্রদর্শনের রীতি ছিল। লিখিত বিবরণ থেকে জানা যায়, আধুনিককালে ডিম নিক্ষেপের কাহিনি প্রথম ধরা পড়ে ১৮০০ শতকের দিকে। তৎকালীন ‘আইল অফ ম্যান’-এ (আয়ল অফ ম্যান) মেথোডিস্টদের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনা রেকর্ড আছে। ১৮৩৪ সালে আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ারের কনকর্ডেই দাসত্ববিরোধী বক্তা জর্জ হোয়াইটারকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়েছিল।

১৯১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিলি হিউজকে এক জনসভায় ডিম ছোড়া হয়েছিল—এটি তখনকার কনস্যক্রিপশন (বহুধামের) বিরোধী আন্দোলনের উত্তাপে ঘটে। ২০০১ সালে ব্রিটেনে সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকটকে এক তরুণ কৃষক ডিম নিক্ষেপ করলে প্রেসকট প্রতিক্রিয়ায় তাকে ঘুষি মারে; ঘটনাটির ছবি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং ডিম নিক্ষেপ বিষয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়।

আধুনিক কালে হলিউড তারকা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারও ২০০৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রচারণার সময় ডিমের আঘাতে পড়েছেন; তিনি নির্বিকারভাবেই ডিম ঝেড়ে ফেলে দেন। ২০০৪ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ডিমের আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ২০১১ সালে আফগান বিক্ষোভকারীরা জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ইরানি কনস্যুলেটের দিকে ডিম নিক্ষেপ করে। ২০১৩ সালে লন্ডনে কিছু বিক্ষোভকারী প্রয়াত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের কফিন ডিম দিয়ে ভরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল; নিরাপত্তার কারণে তা বাস্তবে করা সম্ভব হয়নি। একই বছর ফরাসি কৃষকরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে প্রতিদিন লক্ষাধিক ডিম ভাঙার শপথ নিয়েছিলেন।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু গেলম্যান বলেছিলেন, খাবার ছুড়ে মারার পেছনে কয়েকটি বাস্তব কারণ কাজ করে—এটি সস্তা, সহজলভ্য এবং দৃশ্যমান। খাদ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট বোনাপিটিটির এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, টমেটো বা ডিম নিক্ষেপ করা সহজ; এগুলো ফেটে গেলে দৃশ্যগত ও মানসিকভাবে তৃপ্তি পাওয়া যায়। সাধারণত খাবার ছুড়ে মারাকে অহিংস প্রতিবাদের একটি প্রতীকধর্মী কর্ম হিসেবে দেখা হয়। পুলিশের দিকে ইট বা পাথর ছোড়া হলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ডিম বা টমেটো নিক্ষেপ করলে শতভাগ আক্রমণাত্মক হিসেবে দেখা হয় না — তাই অনেকেই এটি বেছে নেন।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে