ঢাকা, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

হাসিনা-শর্মার পর এবার মোদির পালা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১১ ১১:৫২:৩৩
হাসিনা-শর্মার পর এবার মোদির পালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের চারপাশে একের পর এক রাজনৈতিক পালাবদল এবং দেশটির অভ্যন্তরে বিরোধীদের ক্রমবর্ধমান চাপ—সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরকারের পতন এবং ভারতের ভিতরে ক্রমশ জমে ওঠা রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতের শাসনব্যবস্থার জন্য এক ‘ঝড়ের পূর্বাভাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয় যে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে আগুন ধরিয়ে দেয়। শেষপর্যন্ত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।

কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের মধ্য দিয়ে নেপালের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। সামাজিক মাধ্যমে কড়াকড়ির প্রতিবাদে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলন শুধু সরকারের পতনই ডেকে আনে না, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ‘ডমিনো ইফেক্ট’ এর শুরু বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের শাসনের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্র ও সাধারণ জনগণ আন্দোলনে নামে। ক্ষমতা পরিবর্তনের দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তীব্র বিক্ষোভ হয়, যার জেরে সরকারের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।

২৯ মাস ধরে জাতিগত দাঙ্গায় উত্তপ্ত মনিপুর রাজ্য। মেইতেই এবং কুকি গোষ্ঠীর সংঘর্ষে বহু মানুষের প্রাণহানি এবং হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত। রাজ্য সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং দাঙ্গা দমনে ব্যর্থতার অভিযোগে বিজেপির উপর আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে বিজেপির তিনজন নেতা দল ত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে "ভোট চোর", "স্বৈরাচারী"—এমন অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। উত্তর ভারত থেকে উত্তর-পূর্ব পর্যন্ত মোদী বিরোধী স্লোগান ছড়িয়ে পড়েছে।

বিজেপির অন্দরের একাংশ এখন মোদীর ৭৫ বছর বয়সে অবসর নেয়ার নিয়ম স্মরণ করিয়ে দিয়ে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে। মোদী সরকারের দীর্ঘ শাসনকালেও অর্থনৈতিক বৈষম্য, বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা অনেক নেতাকেই প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করছে।

জনপ্রিয় তামিল অভিনেতা বিজয় থালাপতির নতুন রাজনৈতিক দল দক্ষিণ ভারতে বিজেপির জন্য নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। সেখানে বিজেপির প্রভাব ঐতিহাসিকভাবেই দুর্বল, এখন তা আরও সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রতি নানান ইস্যুতে অবনতির দিকে। মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন।

নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে চলমান বিতর্ক, নির্বাচনী হলফনামায় অস্পষ্টতা ও তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে নেতাদের পতন, দেশের অভ্যন্তরে চলমান ক্ষোভ, দক্ষিণে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান এবং আন্তর্জাতিক মিত্রদের দূরত্ব—সব মিলিয়ে ভারতের রাজনৈতিক পরিবেশে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

বিশেষ করে ২০২৬ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে এসব ইস্যু মোদী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে