ঢাকা, শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে নতুন শুল্কে সুযোগ-চ্যালেঞ্জ

২০২৫ আগস্ট ০৯ ১৯:২৮:৫৪
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে নতুন শুল্কে সুযোগ-চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর এই শুল্ক হার ঠিক করা হয়। এর সঙ্গে বিদ্যমান ১৬.৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক যোগ হয়ে কার্যকর শুল্ক হার দাঁড়াচ্ছে ৩৬.৫ শতাংশ। শুরুতে এটি বেশি মনে হলেও বাস্তবে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় মোটেও খারাপ অবস্থানে নেই। যেখানে প্রতিযোগী দেশগুলোকে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের হার তুলনামূলকভাবে কম।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৮৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৯.৩ শতাংশ, যা এখন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন শুল্ক নীতি বিভিন্ন দেশকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে এবং এটি বাংলাদেশের জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করেছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা এ নিয়ে আশাবাদী। কারণ মার্কিন পোশাক ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতারা তুলনামূলক কম শুল্কের কারণে বাংলাদেশকে বেশি অগ্রাধিকার দিতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিকারী অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ শুল্কের এই হারকে স্বস্তিদায়ক বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন আমদানিকারকরা অতিরিক্ত শুল্কের কিছু অংশ বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের বহন করতে বলছেন, যা মুনাফা কমিয়ে দিতে পারে। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানও রপ্তানি বৃদ্ধির আশাবাদ প্রকাশ করেছেন, তবে সতর্ক করেছেন যে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা বাড়তি শুল্কের বোঝা সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে।

প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান তুলনামূলকভাবে ভালো। ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে কার্যকর শুল্ক হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে, ভারতের ক্ষেত্রে এটি ৬৬.৫ শতাংশ এবং চীনের ক্ষেত্রে ৫৫ শতাংশ। এর বিপরীতে বাংলাদেশের ৩৬.৫ শতাংশ শুল্ক অনেক কম। এই সুবিধার পেছনে মূল কারণ তুলা নির্ভর পোশাক উৎপাদন। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যে তুলার ব্যবহার বেশি, যা সিনথেটিক পোশাকের তুলনায় কম শুল্কের আওতায় পড়ে।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত তুলা ব্যবহার করলে নির্দিষ্ট অংশে শুল্ক মওকুফের সুবিধা রয়েছে। কিছু রপ্তানিকারক ইতিমধ্যেই পণ্যে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মার্কিন তুলা ব্যবহার করছেন, ফলে তাদের জন্য শুল্ক হার আরও কমছে।

তবে বাজার সংকোচন বড় একটি ঝুঁকি। কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র বছরে ১০৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করলেও ২০২৪ সালে তা কমে ৮৫ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে এবং উচ্চ শুল্কের কারণে এটি আরও কমে যেতে পারে। ক্রয়াদেশ কমে গেলে কম শুল্কের সুবিধা থেকেও প্রত্যাশিত লাভ নাও হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই শুল্ক চুক্তি কোনো শর্ত ছাড়া আসেনি। বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়োজাহাজ, গম, সয়াবিন, তুলাসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য বেশি পরিমাণে আমদানি করতে হবে এবং অভ্যন্তরীণ বাজার যুক্তরাষ্ট্রের দুগ্ধ, মাংস ও পোলট্রি শিল্পের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। এছাড়া, শিল্প খাতের কাঁচামাল সংগ্রহে চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর চাপও এসেছে।

বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেছেন, অত্যন্ত ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে এবং আশা করা যায় রপ্তানি বাড়বে। তিনি মনে করেন, পোশাকের পাশাপাশি জুতা, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিও এই শুল্ক সুবিধা থেকে উপকৃত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক ব্যবস্থা বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে, যেখানে সুযোগের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

মিজান/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে