ঢাকা, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
Sharenews24

‘ও আমার জীবনে শান্তি এনেছে, আমি ওর জীবনে রোমাঞ্চ এনেছি'

২০২৫ জুন ২২ ১৩:৫৮:২৭
‘ও আমার জীবনে শান্তি এনেছে, আমি ওর জীবনে রোমাঞ্চ এনেছি'

বিনোদন প্রতিবেদক: বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট অভিনেতা আমির খান প্রযোজিত ও অভিনীত নতুন সিনেমা ‘সিতারে জমিন পার’ শুক্রবার (২০ জুন) মুক্তি পেয়েছে। এস প্রসন্নার পরিচালনায় এই সিনেমায় আমিরের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ১০ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিল্পী। যার ফলে ছবিটিকে ঘিরে দর্শকদের বাড়তি আগ্রহ তৈরি করেছে।

২০০৭ সালে আমির খান পরিচালিত ‘তারে জমিন পার’ সিনেমাটি ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিল। সেই সিনেমার সিকুয়েল হিসেবে এবার ২০২৫ সালের 'সিতারে জমিন পার' ছবি পরিচালনায় তিনি নেই।

সম্প্রতি মুম্বাইয়ের সান্তাক্রুজে নিজের প্রোডাকশন হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমির খান জানান, “আমি তখন (তারে জমিন পার) বাধ্য হয়েই সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলাম। তবে নিজেকে এখনো কেবল একজন অভিনেতা ভাবি। পরিচালনায় নামলে অভিনয় ছেড়ে দিতে হবে, সেটি আমি চাই না।” এর মধ্য দিয়ে তিনি তার অভিনয় সত্তার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আত্মপ্রত্য তুলে ধরেছেন।

সাংবাদিকের সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে আমির খান তার কাজ, দর্শন, ব্যর্থতা ও ভালোবাসার বিষয়ে অকপটে কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমার প্রায় ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সেটে সৃজনশীল মানুষের মধ্যে ইগো, মতবিরোধ, টানাপোড়েন থাকেই। কিন্তু এই সিনেমার শুটিংয়ে সেই চিত্র একেবারে উল্টো। ওই ১০ জন বিশেষ শিল্পী সেটে পা রাখতেই যেন এক পবিত্রতা ছড়িয়ে যেত। ওদের মধ্যে কোনো অহংকার নেই, নেই গলা উঁচিয়ে কথা বলার অভ্যাস। এমনভাবে সহযোগিতা করেছে, যা আমাদেরও শিখিয়ে গেছে কীভাবে সহনশীল হতে হয়।”

সাংবাদিকদের মিস্টার পারফেকশনিস্ট আরও জানান, “ওদের থেকেই বেশি টেক নিতে হয়েছে আমাকে। ওরা বলত—‘বড় মানুষের এমন ভুল হতেই পারে।’ খুব সরল ছিল ওদের দৃষ্টিভঙ্গি। আমি জানি না, ওরা আমার থেকে কী শিখেছে, তবে আমি ওদের থেকে ধৈর্য আর ইতিবাচক মানসিকতা শিখেছি।”

নিজের সিনেমা নির্বাচন ও পরিচালনা প্রসঙ্গে আমির খান বলেন, “আমি কখনো সামাজিক বার্তা দিয়ে সিনেমার বিচার করি না। আমি নিজেকে দর্শক ভাবি—যদি গল্পটা আমাকে হাসায়, কাঁদায়, হৃদয় ছুঁয়ে যায়, তবে আমি সেটির অংশ হই। যদি বার্তা থাকে, তো ভালো। তবে আমি একজন মনোরঞ্জক, আমার দায়িত্ব আপনাদের মনোরঞ্জন করা।”

তবে ব্যর্থতা নিয়ে বরাবরই স্পষ্টবাদী আমির। ‘লাল সিং চাড্ডা’ সিনেমার ব্যর্থতা তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছিল। তিনি বলেন, “১৮ বছর পর এত বড় একটা ফ্লপ—আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। মানসিক অবসাদে ছিলাম। আমার পরিবার আমাকে ধরে রেখেছে তখন। আম্মি, কিরণ, জুনাইদ, আইরা—ওদের ভালোবাসা আমাকে ফিরিয়ে এনেছে। আমি মজা করে বলি— সিনেমাটা হিট হলে হয়তো এত ভালোবাসা পেতাম না।”

আমিরের ‘থাগস অব হিন্দুস্তান’ সিনেমার ব্যর্থতা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “এ সিনেমাটি যে চলবে না, আমি আগেই বুঝেছিলাম। ভিক্টর বা আদিত্য চোপড়াকে বলেছিলাম— কিন্তু ওরা আমার কথা শোনেনি। এমনকি সিনেমা মুক্তির আগে আমি দারুণ ঘুমিয়েছিলাম। কারণ জানতাম, কী আসতে চলেছে।”

আমির খানকে শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষকে নিয়ে বলিউডে সিনেমা কম হয় কেন, এমন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, “কারণ নির্মাতারা ভাবেন— এ ধরনের সিনেমার বাজার নেই। অথচ 'তারে জমিন পার', 'চিল্লার পার্টি', 'স্ট্যানলি কা ডাব্বা'-এর মতো কাজগুলোই মানুষ মনে রেখেছে।” তিনি বিশ্বাস করেন, ভারতীয় শিশুদের নিজস্ব গল্পে তৈরি সিনেমা দেখানো দরকার। “আমাদের সমাজে রামও আছে, রাবণও। আমি চাই, আমার সিনেমা রাবণকে বিদায় দিয়ে রামকে জাগিয়ে তুলুক,” বলেন তিনি।

সাম্প্রতিক আলোচনায় আসা আট ঘণ্টার কর্মঘণ্টা নিয়ে বলিউডে বিতর্কে নিয়ে আমির তার মত স্পষ্ট করেন: “৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা ঘুম, ৮ ঘণ্টা নিজের জীবনের জন্য—এটাই হওয়া উচিত।” তিনি নিজেও একসময় ১৬-১৮ ঘণ্টা কাজ করেছেন উল্লেখ করে বলেন, “কিন্তু অভিনয়কে কখনো কাজ মনে করিনি। ওটা আমার আবেগের জায়গা।”

গৌরীকে নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে আমির খান বলেন, “আমি গৌরীকে লুকিয়ে রাখতে চাইনি। যাকে ভালোবাসি, তাকে সম্মান দিয়ে সামনে আনতে চাই। আমি চরমপন্থি, আর গৌরী শান্ত। আমাদের পার্থক্যই আমাদের টানার কারণ। ও আমার জীবনে শান্তি এনেছে, আর আমি ওর জীবনে রোমাঞ্চ এনেছি।”

সিরাজ/

পাঠকের মতামত:

বিনোদন এর সর্বশেষ খবর

বিনোদন - এর সব খবর



রে