ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ভারতকে ‘না’, বাংলাদেশেই মিলবে ১ কোটি ২৫ লাখ গরু

২০২৫ মে ২৬ ১০:৪৩:৪৯
ভারতকে ‘না’, বাংলাদেশেই মিলবে ১ কোটি ২৫ লাখ গরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য বাংলাদেশে আর কোনো আমদানিকৃত বা সীমান্ত ঘেঁষা চোরাই গরুর প্রয়োজন নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে এবছর কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ এবং তা সম্পূর্ণভাবে দেশীয় উৎস থেকেই পূরণ করা সম্ভব হবে।

এর ফলে বহু বছর ধরে চলা ভারতীয় গরুর উপর নির্ভরতা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভারতের পশু-ভিত্তিক কৃষি অর্থনীতিতে। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও আসামসহ ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে প্রায় ৩০ লাখ গরু অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি রুপি, জানিয়েছে আনন্দবাজার, হিন্দুস্তান টাইমস ও দৈনিক ভাস্করের মতো শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম।

২০১৪ সালে মোদি সরকারের ‘কাউ প্রোটেকশন’ নীতির আওতায় ভারতে গরু জবাই নিষিদ্ধ হয়। এই সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হিসেবে বাংলাদেশ যখন ২০২৫ সালে গরু আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, তখন এসব পশু ভারতীয় বাজারের জন্য বিশাল অর্থনৈতিক বোঝায় পরিণত হয়।

অন্যদিকে, বাংলাদেশে গরু উৎপাদনে দেখা গেছে অভাবনীয় অগ্রগতি। চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়াসহ অন্তত ৩০টি জেলায় খামারভিত্তিক পশু উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। লাখ লাখ খামারি এখন অনলাইন হাটে গরু বিক্রি করছেন। তারা পাচ্ছেন ডিজিটাল স্বাস্থ্য সনদ এবং মূল্য যাচাইয়ের সুবিধা, যা বাজারকে আরও সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ করেছে।

এখন সরকারের লক্ষ্য শুধু অভ্যন্তরীণ বাজার নয়, বরং আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজার। ইতোমধ্যে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান ও কিছু আফ্রিকান দেশ বাংলাদেশি গরু আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি আন্তর্জাতিক গরু রপ্তানি চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে।

সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ গরু রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এবং আন্তর্জাতিক পশু স্বাস্থ্য সংস্থা আশাবাদ জানিয়েছে—এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ গবাদিপশু খাত থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চীন, মালয়েশিয়া ও ওমানের সঙ্গে হালাল মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ক চুক্তির আলোচনাও শুরু করেছে। এক সময় আমদানিনির্ভর এই খাত এখন হয়ে উঠছে একটি পূর্ণাঙ্গ রপ্তানিমুখী অর্থনীতি, যা সম্ভব হয়েছে সুপরিকল্পিত উৎপাদন, প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা এবং খামারিদের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু একটি অর্থনৈতিক অর্জন নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব হ্রাসের গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্তও। বাংলাদেশ এখন গরু ছাড়াও ধাপে ধাপে ভারতীয় পেঁয়াজ, আলু, রসুন, ওষুধ এবং নির্মাণসামগ্রীর বিকল্প উৎস খুঁজছে, যা ভারতের জন্য কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে এক বড় ধাক্কা।

মুয়াজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে