ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

ধনী হতে সাজ্জাদ ও তামান্নার ভয়াবহ গেম

২০২৫ মার্চ ১৮ ১১:১৪:৩৩
ধনী হতে সাজ্জাদ ও তামান্নার ভয়াবহ গেম

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের এক সময়ের মুরগির দোকানের কর্মচারী, আজকের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্না শারমিনের জীবনযাত্রা এখন সংবাদে আলোচিত। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ত্রাস সৃষ্টিকারী ছোট সাজ্জাদ এবং তার স্ত্রী তামান্না, দুজনেই স্থানীয় অপরাধ জগতে পরিচিত নাম। তবে তামান্না তার স্বামী সাজ্জাদের চেয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে, তার কার্যক্রম এবং মন্তব্য দিয়ে চট্টগ্রামে আলোচনার ঝড় তুলেছেন।

সাজ্জাদ ছোট বয়সে অসহায় অবস্থায় বড় হয়েছেন। মায়ের মৃত্যু পর তিনি চট্টগ্রামের নজু মিয়ারহাট এলাকার একটি মুরগির দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায় তিনি অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন এবং সাজ্জাদ আলী খান নামে এক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীর অনুসারী হয়ে ওঠেন। তার একসময়কার অপরাধের মধ্যে জমি বিক্রি, নতুন বাড়ি নির্মাণে চাঁদাবাজি ও মারামারি ছিল। তিনি স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্যাংগুলির সদস্য হিসেবে নামকরা হন।

পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে সাজ্জাদ দীর্ঘ সময় পালিয়ে থাকার পর অবশেষে ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তার গলাকাটা লাশ পাওয়া যায় কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া এলাকায়। তার প্রথম স্ত্রী শিলা, তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য ছিলেন, যিনি খ্যাতি পেয়েছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের নেত্রী হিসেবে। তবে, শিলার শারীরিক পরিবর্তন এবং স্টেজ শো করার সময় গুলি খেয়ে মারা যান।

তামান্না শারমিন, সাজ্জাদের স্ত্রী, তার পেশাগত জীবনে একজন ড্যান্সার হিসেবে পরিচিত। দুবাইয়ে বিভিন্ন নাইট ক্লাবে কাজ করার সময় সেখানেই তার পরিচয় হয় সাজ্জাদের সঙ্গে। তাদের সম্পর্কের শুরু হয়েছিল মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান এবং পরে, ২০২৪ সালের প্রথম দিকে, তাদের সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন ঘটে। এই সম্পর্কের পর তারা রাউজানের একটি মসজিদে বিয়ে করেন। এটি তামান্নার তৃতীয় বিয়ে এবং সাজ্জাদের দ্বিতীয় বিয়ে ছিল।

তামান্নার পূর্ববর্তী বিয়েগুলি ছিল স্বাভাবিক সামাজিক পরিবেশে, তবে সাজ্জাদকে বিয়ে করার পর তার জীবন সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যায়। তিনি শুধু একজন সমাজসেবক হয়ে ওঠেননি, বরং তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত হয়ে পড়েন।

২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় সাজ্জাদ দুই ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেন। হত্যার পর তিনি পালিয়ে যান এবং রাউজান এলাকায় আশ্রয় নেন। তামান্না, সাজ্জাদের এই হত্যা মামলার পর তাকে বাঁচানোর জন্য নানা হুমকি দেন এবং বলেন, "আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে সাজ্জাদকে জামিন করাব।" এমন ভয়ঙ্কর হুমকি তার অপরাধমূলক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে তোলে।

সম্প্রতি, ২০ লাখ টাকা অফার করে পুলিশের কাছে সাজ্জাদকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন সাজ্জাদ এবং তামান্না। তবে পুলিশ এই চেষ্টাকে অগ্রাহ্য করে এবং তাকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। গ্রেফতারের পর, তামান্না শারমিন আবারও ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, "এগুলো নিয়ে দুঃখ প্রকাশের কিছু নেই, আমার জামাই বীরের মতো ফিরে আসবে।"

এই ধরনের পরিস্থিতি একদিকে যেমন তার শাসনামলের শক্তি প্রদর্শন করে, তেমনি জনগণের মধ্যে উদ্বেগ ও শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। তামান্না ও সাজ্জাদ এখনও অপরাধমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সাজ্জাদ ও তার দলের কার্যক্রম এতটাই প্রবল যে নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলেও তাদের কাছে চাঁদা দিতে হয়। বেশ কিছু বছর ধরে এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে।

সাজ্জাদ ও তামান্নার এই জীবনযাত্রা আমাদের দেখাচ্ছে কীভাবে অপরাধ জগতের মানুষরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে নিজেদের শক্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এই দম্পতির অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শুধু চট্টগ্রামই নয়, পুরো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ করছে। তাদের গ্রেফতার এবং বিচার প্রক্রিয়া দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে ধরছে।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে