ঢাকা, শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

সচিবালয়ে আগুন: উত্থাপিত ৫টি রহস্যময় প্রশ্নের বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট

২০২৫ জানুয়ারি ০৩ ১৮:১৮:৩৭
সচিবালয়ে আগুন: উত্থাপিত ৫টি রহস্যময় প্রশ্নের বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক:সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তদন্তের ফলাফল এবং ঘটনার পেছনে থাকা সন্দেহজনক বিষয়গুলো নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। এই ঘটনায় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং পাল্টাপাল্টি দোষারোপের মাধ্যমে অনেকেই আগুনের কারণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিশেষত, দুটি আলাদা কক্ষে আগুনের সূত্রপাত, কুকুরের মৃতদেহ, বিলম্বিত অগ্নিনির্বাপন এবং সাদা পাউডারের উপস্থিতি নিয়ে নানা জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে।

তবে, তদন্ত কমিটি কীভাবে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, তা জানতে বিস্তারিতভাবে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। তদন্ত কমিটির সদস্যরা, যারা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিকৌশল এবং ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক, তাদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর মিলেছে।

১. দু'দিকে কেন আগুন?সচিবালয়ের আগুন নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল, দুটি ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে কেন আগুন ছড়িয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, সচিবালয়ের দক্ষিণ দিকে ভবনটির পূর্ব ও পশ্চিম অংশে আগুন জ্বলছে। তবে বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: ইয়াছির আরাফাত খান বলেন, এই ছবিটি বেশ কিছু সময় পর রেকর্ড করা হয়েছিল, যখন আগুনটি আগের থেকে অনেক ছড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘‘শুরুতে এসব জায়গায় আগুন ছিল না। এটা আসলে আগুনের পরে আধাঘণ্টার সিনারিও। তখন পুরো কোরিডোর পুড়ছে, কিছু রুমে আগুন ঢুকছে।’’

এছাড়া, ভবনের দরজা ও ইন্টেরিয়রের বিভিন্নতা এবং রুমের কাঠামোও আগুনের ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু রুমে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন সেখানে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে।

২. সাদা পাউডার ও নাশকতার সন্দেহসচিবালয়ে আগুন নেভানোর পর সাদা পাউডারের মতো একটি বস্তু পাওয়া যায়, যা নিয়ে নানা সন্দেহ দেখা দেয়। যদিও তদন্ত কমিটি নিশ্চিত করেছে যে, এটি কোনো বিস্ফোরক পদার্থ ছিল না। বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো: ইয়াছির আরাফাত জানান, "এটা চুন জাতীয় পদার্থ ছিল, কোনো বিপজ্জনক বস্তু নয়।"

তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজও পরীক্ষা করা হয় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটি কোনো ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) নয়।

৩. কুকুরের মৃতদেহআগুনের সময়, সাত নম্বর ভবনের ছয়তলায় একটি কুকুরের মৃতদেহ পাওয়া যায়, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল— কিভাবে এটি ভবনে ঢুকেছিল। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কুকুরটি ভবনে এসে একটি চেয়ারে শুয়ে পড়ে, পরে আগুনের কারণে সেটি মারা যায়। তবে, কুকুরটি ভবনে কিভাবে প্রবেশ করেছিল, সে সম্পর্কে সিসিটিভি ফুটেজে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, তারা পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ২৪ ঘণ্টার আরও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে।

৪. আগুন নেভাতে বিলম্ব কেন?আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তিন মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও, তাদের জন্য সচিবালয়ে প্রবেশ করা সহজ হয়নি। বড় গাড়ি নিয়ে প্রবেশে সমস্যা ছিল এবং পানি সরবরাহের অভাব ছিল। বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের শিক্ষক ইয়াসির আরাফাত বলেন, "ফায়ার ডিটেক্টর সিস্টেম এবং হোসগুলির অবস্থা ত্রুটিপূর্ণ ছিল, যা আগুন নেভাতে বিলম্ব ঘটায়।"

৫. নাশকতার প্রমাণ?সরকারের প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, আগুনের সূত্রপাত বৈদ্যুতিক ‘লুজ কানেকশন’ থেকে হয়েছিল। সিসিটিভি ফুটেজে একটি বৈদ্যুতিক স্পার্ক থেকে আগুনের শুরু ধরা পড়েছে, যা সময় নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। তদন্তে আরও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, আগুন নাশকতামূলক নয়, বরং বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে এটি ঘটেছে।

তবে, তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, আগুনের সঠিক উৎস এবং কারণ নিশ্চিত করতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে, যার মধ্যে বিদেশে আলামত পরীক্ষার পরিকল্পনাও রয়েছে।

এখানে আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলবে কিনা, তা জানার জন্য তদন্তের পরবর্তী পর্যায়ের রিপোর্টের অপেক্ষা করতে হবে।

কেএইচ

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে