ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

যে কারণে বিজেপি নেতারা বারবার বাংলাদেশিদের টার্গেট করেন?

২০২৪ সেপ্টেম্বর ২৫ ১৫:৩৬:০৯
যে কারণে বিজেপি নেতারা বারবার বাংলাদেশিদের টার্গেট করেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের বিজেপি নেতারা বাংলাদেশীদের নিয়ে প্রায় নানা ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করেন। কখনো উইপোকা, কখনো বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করার হুমকি, আবার কখনো উল্টো করে ঝুলিয়ে শায়েস্তা করা হবে এমন মন্তব্যও করেছেন।

ভারতের বিজেপি নেতাদের এমন লাগামহীন মন্তব্যের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার কখনো কোন প্রতিবাদ বা মন্তব্য করেনি। তবে শক্তভাবে সরব হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।

সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঝাড়খণ্ডে দলের এক জনসভায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তবে এটি তার প্রথমবার নয়, এর আগেও বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করেছেন তিনি।

ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী অন্তত দুবার তিনি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উইপোকা বলেছেন, একবার বলেছিলেন এদের বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হবে।

শুধু যে অমিত শাহ এধরণের মন্তব্য করেছেন, তা নয়। বিজেপির অন্যান্য নেতাদের মুখেও এ ধরনের মন্তব্য শোনা গেছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে তারা এমন মন্তব্য হরহামেশাই করেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন আগে যেসব 'কুকথা' বলা হয়েছে, সেসব শুনেও শেখ হাসিনার সরকার কোনো প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে এধরনের মন্তব্য সহ্য করবে না, সেটা স্পষ্ট হয়ে গেছে ঢাকায় ভারতীয় উপ-রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে।

অমিত শাহ যা বলেছেন

ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে দলের এক জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। ওই ভাষণের ভিডিওকে দেখা যায়, অমিত শাহ একাধিকবার রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়টি নিয়ে এসেছেন।

অমিত শাহ বলেন, ‘ঝাড়খণ্ডে একবার সরকার বদল করুন। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, ঝাড়খণ্ড থেকে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে খুঁজে বের করে ঝাড়খণ্ড থেকে তাড়ানোর কাজটি ভারতীয় জনতা পার্টি করবে। তারা আমাদের সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা আমাদের সম্পত্তি দখল করে নিচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এরা আমাদের মেয়েদের নানা ভাবে ভুয়া বিবাহ করছে। তারা আমাদের রোজগারপত্রও লুঠ করছে। ঝাড়খণ্ডে অনুপ্রবেশকারীদের কোনো জায়গা নেই, একমাত্র বিজেপি সরকারই এটা করতে পারে।’

এরপর অমিত শাহ দাবি করেন, ‘ঝাড়খণ্ডে যদি এভাবে অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে, তাহলে ২৫-৩০ বছরের মধ্যে এখানে অনুপ্রবেশকারীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠবে।’

ভারতের স্বরাষ্টমন্ত্রী ঝাড়খণ্ডের নারীদের ওপরে অত্যাচার ও হত্যার কথা প্রসঙ্গে বলেন, ওইসব ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের ওই রাজ্যের সরকার কিছু বলে না, কারণ তারা এর ভোটব্যাঙ্ক, তারা অনুপ্রবেশকারী।

তিনি বলেন, ‘আমি আজ বলে যাচ্ছি, আপনারা এখানে পদ্ম ফুলের সরকার বানান, এইসব অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করার কাজটা আমরা করব।’

বার বার কেন বিজেপি নেতারা বাংলাদেশিদের টার্গেট করে?

হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির গবেষক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, একটা সময়ে পাকিস্তানকে লক্ষ্য করে যে-ধরনের মন্তব্য করতেন হিন্দুত্ববাদী নেতা-নেত্রীরা, এখন বাংলাদেশিদের উদ্দেশেও সেধরনের কথা বলছেন তারা। তার কথায়, এধরণের সংগঠন সবসময়েই একটা অপর পক্ষ খাড়া করার চেষ্টা করে।

তিনি বলেন, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর কাছে সেই অপর পক্ষ হচ্ছে মুসলমানরা। সব মুসলমানকেই সেজন্য এরা বহিরাগত বলার চেষ্টা করে। এতদিন তাদের কাছে অপর পক্ষ ছিল পাকিস্তান। কিন্তু গত বছর দশেক ধরে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশকেও এরা টার্গেট করছে।

স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে তারা যে রাজনীতি করে, সেটা পুরো পূর্ব ভারতেই করছে তারা। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা তো ছিলই, সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড আর ওড়িশাতেও সেই একই পরিকল্পনা করেছে হিন্দুত্ববাদীরা।

তিনি বলেন, আর এই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে এদের প্রচারের ফলে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা অন্যান্য রাজ্যে বিপদে পড়ছেন। কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র বা দিল্লি লাগোয়া অঞ্চলে তো অনেকদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলমানদেরও বাংলাদেশি, অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দেয়া হয়। আর অতি সম্প্রতি ওড়িশাতেও একই ধরণের ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ ও কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশি মানুষকে নিয়ে এ ধরনের কুকথা ভারতের নেতারা অনেক সময়েই তাদের নিজেদের সমর্থকদের, ভোটদাতাদের উদ্দেশ্য করে বলে থাকেন, বিশেষত: নির্বাচনের সময়ে। ভোটারদের মধ্যে একটা মেরুকরণের প্রচেষ্টা এটা।

নজিরবিহীন প্রতিবাদ অন্তবর্তী সরকারের

অমিত শাহর মন্তব্য নিয়ে বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার গভীর আপত্তি, তীব্র ক্ষোভ এবং চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং আহ্বান জানিয়েছে রাজনৈতিক নেতারা যেন এমন আপত্তিকর এবং অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল পদ থেকে আসা এমন মন্তব্য দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বোঝাপড়ার চেতনাকে ক্ষুণ্ণ করে।

বিজেপি নেতার কোনো মন্তব্যের কারণে ভারতের কাছে কূটনৈতিক স্তরে বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানাচ্ছে, এরকম ঘটনা নজিরবিহীন বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ভারতের উপ-রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে প্রতিবাদ জানালো, এটা নজিরবিহীন। এর আগেও নেতা-নেত্রীরা এ ধরনের কটু কথা বলেছেন, কিন্তু সেই সময়ে বাংলাদেশের যে সরকার ছিল, তাকে ভারত সরকার বন্ধু বলে মনে করত। তাদের অস্বস্তি হলেও এরকম কোনো পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবেনি।

তিনি আরও বলেন, এখন যেহেতু দুই দেশের সম্পর্কটা কিছুটা জটিল, কিছুটা স্পর্শকাতর। তাই নজিরবিহীন হলেও বাংলাদেশের এই অবস্থানটা কিন্তু একেবারে বিস্ময়কর নয়।

সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরীর বিশ্লেষণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বোধহয় এরকম একটা বার্তাও দিতে চাইছে যে তারা আর ভারত সরকারের প্রভাবে থাকতে প্রস্তুত নয়।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে