ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ঋণ কেলেঙ্কারি থেকে শেয়ারবাজারের ব্যাংক রক্ষা

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৫ ১০:৩২:২৪
ঋণ কেলেঙ্কারি থেকে শেয়ারবাজারের ব্যাংক রক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি রূপালী ব্যাংক থেকে ‘ওরিয়ন রিনিউয়েবলস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ হাজার ৫৫২ কেটি টাকা ঋণ দেয়ার চেষ্টাকে আটকে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর ফলে বড় কেলেঙ্কারি থেকে রক্ষা পেয়েছে ব্যাংকটি।

জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিশেষ ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে রূপালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ওরিয়ন রিনিউয়েবলস’কে ঋণ দেওয়ার চেষ্টা চালায়।

গত ২৪ জুন তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবিরের স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এফআইডির কাছে ঋণ প্রস্তাবটি চূড়ান্ত সম্মতির জন্য প্রেরণ করে। তবে গত ১৪ আগস্ট এফআইডি জানায়, “১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬ (বি) (১) ধারা ওয়েভার দিতে তারা সম্মত নয়।”

এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, “পূর্ববর্তী সরকারের কার্যকালের শেষ দিকে ঋণ অনুমোদনের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। কিন্তু, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এফআইডি তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।”

তিনি আরও জানান, “ওরিয়ন সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য ব্যাংকের ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে সাবেক গভর্নর কার্যালয় থেকে একটি ইতিবাচক মনোভাব প্রদান করা হয়েছিল।”

উল্লেখ্য, ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ‘ওরিয়ন রিনিউয়েবলস মুন্সিগঞ্জের (ওরিয়ন গ্রুপের অধীনে) পক্ষে গত ১৩ মে রূপালী ব্যাংকের ১২২২তম বোর্ড সভায় ১,৫৪১ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করা হয়।

রূপালী ব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়, “ওরিয়ন রিনিউয়েবলস মুন্সিগঞ্জের অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণসহ মোট ঋণের পরিমাণ (৬২.৪৯%) ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রক মূলধনের (২,৪৫৯ কোটি টাকা) সীমা অতিক্রম করবে।” একক ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা হচ্ছে ব্যাংকের মোট মূলধনের ২৫%।

কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারির এক সূত্র মতে, “ওরিয়ন রিনিউয়েবলসে মোট ঋণের পরিমাণ (ঋণ ও অন্যান্য) ছিল প্রায় ১,৮৪২ কোটি টাকা, যার মধ্যে অন্যান্য ঋণের পরিমাণ ছিল ২৯২ কোটি টাকা।” এই ঋণের পরিমাণ হবে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রক মূলধনের ৭৪.৪৩%, যা এফআইডিকে প্রেরিত এক পত্রে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ধারা ২৬ (বি) এবং ধারা ১৩ (১) মোতাবেক, “একজন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান বা কোন গ্রুপকে ঋণ ও অন্যান্য পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ২৫% ঋণ প্রদান করা যাবে।” অন্যদিকে, “একজন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান বা কোন গ্রুপকে কেবলমাত্র ঋণ হিসেবে সর্বোচ্চ ১৫% ঋণ প্রদান করা যাবে।”

এছাড়াও, বিদ্যমান সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং রূপালী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক মূলধন (২,৪৫৯ কোটি টাকা) থেকে ১০ শতাংশের বেশি ঋণ প্রদানের কারণে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বানুমতি গ্রহণ করা ব্যাংকটির জন্য বাধ্যতামূলক ছিল।

তবে ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১২১ ধারায় বলা হয়েছে, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে, বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে, যেকোন নির্দিষ্ট ব্যাংক বা সকল ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই আইনের সকল বা কোন নির্দিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে না তা ঘোষণা করতে পারবে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এফআইডিকে প্রেরিত এক পত্রে জানায় যে, “সরকারের সম্মতিতে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬ (বি) (১) ধারা বাতিল করা যেতে পারে।” একইসঙ্গে, “এই পাঁচ বছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদ্যমান ২৫ শতাংশ সীমা অতিক্রম করে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করতে পারবে।”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “রূপালী ব্যাংক বোর্ড কোনো নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করেই বিপুল পরিমাণ ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। গত সরকারের কার্যকালের শেষ দিকে ওরিয়নের ঋণ অনুমোদনও একই প্রক্রিয়ায় হয়েছে।”

এস/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে