ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

শেষ বেলায় মিউচুয়াল ফান্ডে ঝলক

২০২৩ ডিসেম্বর ২৪ ১৮:৪৪:০৪
শেষ বেলায় মিউচুয়াল ফান্ডে ঝলক

নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে পতন হলেও শেষ বেলায় ঝলক দেখা গেছে।

আজ ডিএসইতে ৮ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে দর কমেছে মাত্র ৫টির। আজ ডিএসইর গেইনার তালিকায় অবস্থান করছে ৩টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের দাপট দেখা গেছে। সপ্তাহ শেষে বাজারে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ তিন প্রতিষ্ঠানই ছিল মিউচুয়াল ফান্ড। এগুলো হলো আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি ফান্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড।

গত সপ্তাহে এসব ফান্ডের ইউনিটের দাম সর্বনিম্ন সাড়ে ১৬ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

বিএসইসির এক খবরে গত সপ্তাহে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মিচ্যুয়াল ফান্ড। সম্প্রতি শেয়ারাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্পদ ব্যবস্থাপকদের লাইসেন্স বাতিলের কড়া হুশিয়ারি দিয়েছে।

এরপর থেকেই দর বাড়তে শুরু করেছে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে। এর ধারাবাহিকতায় আজ সপ্তাহের শুরুতেই ইতিবাচক লেনদেন হয়েছে মিউচুয়াল ফান্ডে।

শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সাময়িকভাবে কিছু ফান্ডের ইউনিটের দাম বাড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে তা স্থায়ী হয় না।

এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে নানা কেলেঙ্কারির ঘটনাও রয়েছে। আবার শেয়ারবাজারে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করায় ফান্ডগুলো ভালো মুনাফাও করতে পারছে না। সব মিলিয়ে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বাজারে যেসব মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে, সেগুলোর বিনিয়োগ নিয়েই বড় ধরনের প্রশ্ন আছে। এসব ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তৈরি হওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণও নেই। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে এসব ফান্ডের ইউনিটের দাম অভিহিত মূল্যের নিচে পড়ে আছে, তাই মন্দা বাজারের সুযোগ নিয়ে কারসাজিকারকেরা এসব ফান্ডের দাম বাড়িয়ে মুনাফা করার চেষ্টা করছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে নিম্নমানের ও বন্ধ কোম্পানির শেয়ারেরই সবচেয়ে বেশি মূল্য বৃদ্ধি ঘটছে। কারসাজির মাধ্যমেই এটি করা হচ্ছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারই ধারাবাহিকতায় এখন কারসাজির মাধ্যমে কিছু মিউচুয়াল ফান্ডের দাম বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করেন একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী।

মূল্য বৃদ্ধিতে মিউচুয়াল ফান্ড এগিয়ে থাকলেও ডিএসইতে এখন লেনদেনে এগিয়ে আছে মূলত মাঝারি মানের কোম্পানিগুলো। ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের খুব বেশি লেনদেন হচ্ছে না। গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন ছিল মাঝারি মানের তথা ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানিগুলোর।

জানা যায়, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের সুবিধার জন্য এবং শেয়ারবাজার উন্নয়নের জন্য নিষ্ক্রিয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলিকে সক্রিয় করার লক্ষ্যে সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) এমন একটি নির্দেশনা জারি করেছে।

বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেয়ারনিউজকে বলেন, এই নির্দেশনা মানতে ব্যর্থ হলে সম্পদ ব্যবস্থাপকদের আইপিও শেয়ারে কোটা সুবিধা প্রত্যাহার করা হবে। তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে লাইসেন্স বাতিল করবে কমিশন।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, কমিশন ২৭টি নিষ্ক্রিয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিকে চিহ্নিত করেছে। যে কোম্পানিগুলি বর্তমানে শেয়ারবাজারে প্রাথমিক পাবলিক অফার (আইপিও) এবং যোগ্য বিনিয়োগকারী অফারগুলিতে (কিউআইও) কোটা সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু শেয়ারবাজার উন্নয়নে কোনো ভূমিকা পালন করছে না।

বিএসইসি এই পর্যন্ত ৬৪টি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিকে লাইসেন্স দিয়েছে। যার মধ্যে ৩৭টি প্রতিষ্ঠান ওপেন-এন্ড এবং ক্লোজড-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করে থাকে।

বাংলাদেশে বর্তমানে মাত্র ৩৭টি ক্লোজড-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড এবং ৮৭টি ওপেন-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। যেগুলোর বাজার মূল্য ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।

স্টক এক্সচেঞ্জে ক্লোজড-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড সক্রিয়ভাবে লেনদেন হলেও ওপেন-এন্ড ফান্ড ট্রেডিংয়ের জন্য যোগ্য নয়।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক দশকে বিনিয়োগকারীদের উল্লেখযোগ্য রিটার্ন দেওয়ার ব্যর্থতার কারণে বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করার চ্যালেঞ্জে রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প।

তারল্য সংকট, অপর্যাপ্ত দক্ষ কর্মী ও নেতৃত্ব এবং সদিচ্ছার অভাবের কারণে এই আস্থার অবনতি ঘটছে। উপরন্তু, সম্পদ পরিচালকদের তহবিল আত্মসাতের ঘটনা বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে আরও নষ্ট করেছে।

বিএসইসি’র অনুসন্ধানে দেখা যায় , অ্যালায়েন্স অ্যাসেট প্রায় ৪৫ কোটি টাকা এবং ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া, কিছু কোম্পানি তহবিল সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এখন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, মিউচুয়াল ফান্ডের ইস্যুকৃত মূলধন ৫ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা এবং বাজার মূলধন ৩ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা।

শেয়ারনিউজ, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে