ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম, তারপরও শেয়ারদর ধরাছোঁয়ার বাইরে

২০২৩ ডিসেম্বর ১৭ ২৩:১০:২৯
আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম, তারপরও শেয়ারদর ধরাছোঁয়ার বাইরে

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড টানা চার বছরেরও বেশি সময় ধরে লোকসানে রয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৩ অর্থবছরে লোকসানের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড সুপারিশও করেনি কোম্পানিটি।

এমনকি আর্থিক প্রতিবেদনে বিভিন্ন অনিয়ম করে আলোচ্য অর্থবছরে খান ব্রাদার্স পিপি তাদের নিট লোকসান কমিয়ে দেখিয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন কোম্পানির নিরীক্ষক। তা সত্ত্বেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ারদর লাফিয়ে বাড়ছে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে। এই সময়ের মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় চারগুণ।

এই অস্বাভিক দর বৃদ্ধির পর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, এর পেছনে তাদের কাছে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। তারপরও কোম্পানিটির শেয়ারদর ধরাছোঁয়ার বাইরে।

২০২৩ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় কোম্পানির নিরীক্ষক জানিয়েছেন, খান ব্রাদার্স পিপি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ৫৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার কাঁচামাল এবং ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার বিক্রিযোগ্য মজুত পণ্য দেখিয়েছে। উল্লেখিত মোট ৫৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকার মজুত পণ্য গত কয়েক বছর ধরেই দেখিয়ে আসছে তারা।

কোম্পানিটির নিরীক্ষক সরেজমিনে যাচাইয়ে অনেক ঘাটতি পেয়েছেন। যেখানে মাত্র ১৯ কোটি ৫ লাখ টাকার পণ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখিত কোম্পানিটির ৪০ কোটি ৭০ লাখ টাকার মজুত পণ্যে ঘাটতি রয়েছে। অতিরঞ্জিত করে দেখানো এই মজুত পণ্যের মাধ্যমে কোম্পানিটি তার নিট লোকসান কমিয়ে দেখিয়েছে বলেও অভিযোগ নিরীক্ষকের।

একই সঙ্গে মজুত পণ্যের অতিরঞ্জন কোম্পানির নিট সম্পদ এবং সংরক্ষিত আয় (রিটেইন আর্নিংস) বেশি দেখাতে সাহায্য করেছে বলে মতামত জানিয়েছে নিরীক্ষক।

নিরীক্ষক আরও জানিয়েছেন, খান ব্রাদার্স পিপি তার আর্থিক হিসাবে রপ্তানির বিপরীতে বকেয়া (গ্রাহকের কাছে বিল পাওনা) হিসেবে ৬ কোটি ২২ লাখ টাকার সম্পদ দেখিয়েছে। যা ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে দেখানো হচ্ছে। যে পাওনার কোনো অংশ আদায় বা সমাধান হয়নি। তারপরেও এর বিপরীতে সঞ্চিতি (প্রভিশনিং) গঠন করেনি কোম্পানিটি।

লোকসানে ডুবতে যাওয়া এই কোম্পানিটি থেকে ৩ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়েছে দেউলিয়া লিজিং কোম্পানি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে। যা অনেক বছর ধরে আর্থিক প্রতিবেদনে সম্পদ হিসেবে দেখিয়ে আসা হচ্ছে। এই ডিপোজিটের অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক। নিয়ম অনুসারে এই ধরনের অনিশ্চয়তায় থাকা ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখার বিধান থাকলেও কোম্পানিটি তা করেনি।

খান ব্রাদার্স পিপি কর্তৃপক্ষ ভ্যাট আইন ২০১২, রুলস ২০১৬ এবং আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী সাব কন্ট্রাক্ট থেকে আয়ের বিপরীতে ভ্যাট অ্যান্ড এআইটি প্রদান করেনি। এই ক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ১ কোটি ৫১ লাখ টাকার ভ্যাট দেয়নি। যার মাধ্যমে প্রকৃত আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা হয়নি এবং আইন ভঙ্গ করা হয়েছে বলে মতামত জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিল এবং গ্র্যাচুইটিও চালু করেনি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

এদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে গত ৯ অক্টোবর খান ব্রাদার্স পিপির শেয়ারদর ছিল মাত্র ২৪ টাকা ৭০ পয়সা। এরপর দুই-এক কার্যদিবস বাদে প্রতিদিনই কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ টাকা ৫০ পয়সায়। অর্থাৎ ৪৭ কার্যদিবস বা দুই মাসের কিছুটা বেশি সময়ের ব্যবধানে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দর বেড়েছে ৭০ টাকা ৮০ পয়সা বা ২৮৬.৬৪ শতাংশ (৩.৮৭ গুণ)।

আলোচ্য সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি কার্যদিবসে অস্বাভাবিক লেনদেনও দেখা গেছে কোম্পানিটির। এর মধ্যে গত ১৭ অক্টোবর সবচেয়ে বেশি ৪২ লাখ ৫২ হাজার ৭১৯টি শেয়ার লেনদেন হয়। আজ রোববার কোম্পানির মাত্র ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৪২৯টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

এই অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ও লেনদেনের কারণ জানতে চেয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে কোম্পানিটিকে বেশ কয়েকবার চিঠি দেয়া হয়। চিঠির জবাবে প্রতিবারই কোম্পানিটি জানিয়েছে, তাদের কাছে এই দর বৃদ্ধি ও অস্বাভাবিক লেনদেনের পেছনে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। সর্বশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর ডিএসইর পাঠানো এক চিঠির জবাবে বৃহস্পতিবারও একই তথ্য জানিয়েছে কোম্পানিটি।

২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া খান ব্রাদার্স পিপির অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৯৮ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং মোট শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৮০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭৭টি।

ডিএসইর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ি, গত নভেম্বর মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার ছেড়ে বড় আকারে মুনাফা তুলেছে। ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ১৩.১৯ শতাংশ। যা ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে এসে দাঁড়িয়েছে ৭.০১ শতাংশে। বিপরীতে ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৫৬.৬৮ শতাংশ। যা ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে এসে দাঁড়িয়েছে ৬২.৮৬ শতাংশে।

শেয়ারনিউজ, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে