ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

তিন মাসে খান ব্রাদার্সের দর বেড়েছে ৩০০ শতাংশ

২০২৩ ডিসেম্বর ১৩ ০৭:৪১:৫৭
তিন মাসে খান ব্রাদার্সের দর বেড়েছে ৩০০ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের এক বছরের বেশি সময় ধরে উৎপাদনে নেই। রপ্তানিমুখী ব্যাগ তৈরির কারখানা বন্ধ করে ওই কারখানায় এখন ভাড়ায় অন্য কোম্পানির জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করছে।

তবে কারখানা বন্ধ থাকলেও বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৫৯ টাকা ৭০ পয়সা বা ৩০০ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানে না কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বা স্টক এক্সচেঞ্জ।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বাজারে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ারদর বৃদ্ধিতে সন্দেহ রয়েছে বিএসইসির। কোম্পানিটি আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে। উল্লেখযোগ্য লেনদেনের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিষয়ে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব তপন কুমার সরকার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, শেয়ারদর বাড়ার সঙ্গে কোম্পানির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উৎপাদন বন্ধ নয়, আমরা এখন সাবকন্ট্রাক্টের কাজ করছি।

ব্রোকার হাউস-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে উৎপাদন বন্ধ এবং লোকসানে রয়েছে এমন কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে কারসাজিকারীরা এখন উঠেপড়ে লেগেছে। বিনিয়োগকারীদের মাঝেও এই ধরনের শেয়ার ক্রয়ে এক ধরনের প্রবণতা তৈরি হয়। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই অতি লাভের আশায় উল্টো লোকসানের সম্মুখীন হয়।

ডিএসইর তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের গত ১৮ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১৯ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর থেকে ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকে কোম্পানিটির শেয়ারদর ও লেনদেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারদর পৌঁছায় ৭৯ টাকা ৬০ পয়সায়। এই হিসেবে তিন মাসের কম সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫৯ টাকা ৭০ পয়সা বা ৩০০ শতাংশ।

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০১ পয়সা। গত বছর একই সময়েও কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ০১ পয়সা।

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১১ টাকা ৮৬ পয়সা। আগের অর্থবছর শেষে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১১ টাকা ৮৭ পয়সায়।

সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে লোকসান কমলেও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি খান ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ। আলোচ্য অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৬ পয়সা, আগের অর্থবছরে এই লোকসান ছিল ১৮ পয়সা।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, শেয়ারটি নিয়ে বাজারে কারসাজি অনেক আগে থেকেই হচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে যারা অভিজ্ঞ তারা তাদের লাভ তুলতে সক্ষম হলেও লোকসান গোনে অনভিজ্ঞরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উচিত এমন কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, কোম্পানিটির প্রায় সব শেয়ারই এখন কারসাজিকারিদের কাছে। তারা এখন বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণায় বিনিয়োগকারীদের কাঁধে শেয়ারটি গছানোর চেষ্টা করছে। তবে বিনিয়োগকারীরা দুর্বল এই শেয়ারটি সম্পর্কে সচেতন হওয়ায় তারা খুব সুবিধা করতে পারছে না। যে কারণে শেয়ারটির দাম ৬০ টাকা অতিক্রম করার পর থেকে লেনদেন কমে এসেছে। কারসাজিকারীরা নিজেরা নিজেরা এখন শেয়ারটি কেনাবেচা করছে। যাতে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যায় ।

২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া খান ব্রাদার্সের কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৯৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৮০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭৭। মোট শেয়ারের মাত্র ৩০.১৩ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তাদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৭.০১ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৬২.৮৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

শেয়ারনিউজ, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে