ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ২৭০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি

২০২৩ নভেম্বর ২৩ ০৭:৩২:২১
ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ২৭০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড থেকে বিক্রি করে দেওয়া জমির দলিল বন্ধক রেখে ২৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। ২০২২ সালের শেষ দিকে এসব জমি বিক্রি করে দিলেও ঋণ নেন চলতি বছরের জুন মাসে। ব্যাংকটির ঋণের টাকা কোথায় বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা কিছুই জানে না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, চলতি বছরের ২২ জুন রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, তার ছেলে মেহেদী হাসান দীপু, কাউসার আহমেদ অপু ও মালিহা হোসেন জোয়ারসাহারা, ভাটারা ও গুলশান মৌজার ৩৩৭.৫৯ শতাংশ জমি বন্ধক রেখে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখা থেকে ২৭০ কোটি ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভাটারা মৌজার চারটি প্লটে রফিকুল ইসলামের বিক্রি করে দেওয়া ৯৩.৮৭ শতাংশ জমিও রয়েছে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে দেওয়া নথি থেকে জানা গেছে, রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের কাছ থেকে এওয়াজবদল দলিল মূলে জমির মালিক হয়েছিলেন।

উল্লেখিত জমির মধ্যে ভাটারা মৌজার ই ব্লকের ৪৮২, ৪৮৩, ৪৮৪, ৪৮৭, ৪৮৮ ও ৪৮৯ প্লটের ২৮.১৩ শতাংশ, ৫০৭, ৫০৮, ৫১১ ও ৫১২ প্লটের ১৫.৫৩ শতাংশ, ৫৩০, ৫৩১, ৫৩২, ৫৩৩, ৫৩৪ ও ৫৩৫ প্লটের ২২.৭০ শতাংশ, ৫৫১, ৫৫২, ৫৫৬, ৫৫৭ ও ৫৫৮ প্লটের ২৭.৫১ শতাংশ জমি রয়েছে।

আলোচ্য জমি ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ নিলেও রফিকুল ইসলাম তা পরিশোধ করে দেন একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর। একই দিন এসব জমির মধ্যে ৪৮২, ৪৮৩, ৪৮৪, ৪৮৭, ৪৮৮ ও ৪৮৯ প্লটের ২৮.১৩ শতাংশ ও ৫৩০, ৫৩১, ৫৩২, ৫৩৩, ৫৩৪ ও ৫৩৫ প্লটের ২২.৭০ শতাংশ আবুল কাশেম গংদের কাছে বিক্রি করে দেন রফিকুল ইসলাম।

এছাড়া ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর ৫৫১, ৫৫২, ৫৫৬, ৫৫৭ ও ৫৫৮ প্লটের ২৭.৫১ শতাংশ জমি বিক্রি করেন ইমরান করিমের কাছে। এদিকে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তামান্না সুলতানার কাছে ৫০৭, ৫০৮, ৫১১ ও ৫১২ প্লটের ১৫.৫৩ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেন রফিকুল ইসলাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট কর্তৃপক্ষ ইমরান করিমের পক্ষে জমির মালিকানা পরিবর্তনের অনুমোদন দিয়েছে।

এছাড়া আবুল কাশেম গংদের মালিকানাধীন ২৮.১৩ শতাংশ এবং তামান্না সুলতানার নামে ১৫.৫৩ শতাংশ জমির মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি। এ ছাড়াও আবুল কাশেম গংদের মালিকানাধীন ২২.৭০ শতাংশের আরেকটি প্লটের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে চলতি বছরের ১৯ মার্চ।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২২ জুন রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, তার ছেলে মেহেদী হাসান দীপু, কাউসার আহমেদ অপু ও মালিহা হোসেন জোয়ারসাহারা, ভাটারা ও গুলশান মৌজার ৩৩৭.৫৯ ডেসিমেল জমি বন্ধক রেখে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখা থেকে ২৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভাটারা মৌজার চারটি প্লটে রফিকুল ইসলামের বিক্রি করা ৯৩.৮৭ শতাংশ জমিও রয়েছে।

এসব জমি তিনি এর আগে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণ পরিশোধের পরপরই জমিগুলো অন্যত্র বিক্রি করে দেন। কিন্তু বিক্রির তথ্য গোপন রেখেই ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে আবারও ২৭০ কোটি টাকা ঋণ নেন। ঋণের বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায়, কোন খাতে বিনিয়োগ করেছেন, সে বিষয়ে ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য নেই।

তিন দফায় এসব অর্থছাড় করা হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা কোথায় বিনিয়োগ হয়েছে সেটাও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করেনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এর মধ্যেই ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড় করেছে ব্যাংক।

এই বিষয়ে গতকাল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখার ম্যানেজার (অপারেশন) এইচ এম ফখরুল আলম সরকার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ঋণ বিতরণের আগে ব্যাংকের বিনিয়োগ বিভাগ, প্যানেল আইনজীবী ও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নথি যাচাই এবং সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। যথাযথ প্রক্রিয়ার বাইরে কাউকে ঋণ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে দেওয়া ঋণের বন্ধকী জমি আগেই বিক্রি করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল আলম বলেন, ‘আমরা ঋণ বিতরণের আগে ভূমি অফিসে তল্লাশি করে জমির মালিক হিসেবে রফিকুল ইসলামকেই পেয়েছি। এই ধরনের অভিযোগ এলে আমরা তল্লাশি করব। ব্যাংকের আইনজীবী বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’

তিনি বলেন, বিক্রীত জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনাদের ব্যাংকে বন্ধক দেওয়া জমিতে অন্য কোম্পানি ও মালিকের সাইনবোর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ছিলাম। হয়তো কেউ ভেঙে ফেলেছে।’

এদিকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে রফিকুল ইসলামের বন্ধক দেওয়া চারটি প্লটের মালিকানার বিষয়ে গুলশান রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের নাম স্থানান্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে এসব জমি রফিকুল ইসলামের মালিকানায় নেই।

এদিকে উপরোল্লিখিত জমি বর্তমান মালিকদের ভোগদখলে রয়েছে বলে জানা যায়। তামান্না সুলতানার জমিতে ১৪ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ শুরু করেছে সুবাস্তু প্রপার্টিজ।

এছাড়া ৪৮২, ৪৮৩, ৪৮৪, ৪৮৭, ৪৮৮ ও ৪৮৯ প্লটের ২৮.১৩ শতাংশ এবং ৫৩০, ৫৩১, ৫৩২, ৫৩৩, ৫৩৪ ও ৫৩৫ প্লটের ২২.৭০ শতাংশ আবুল কাশেমের মালিকানাধীন ড্রিমওয়ে হোল্ডিংস লিমিটেড বহুতল ভবন নির্মাণের সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে। আর ৫৫১, ৫৫২, ৫৫৬, ৫৫৭ ও ৫৫৮ প্লটের ২৭.৫১ শতাংশ জমি ইমরান করিম সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছেন।

শেয়ারনিউজ, ২৩ নভেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে