ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

শেয়ারবাজারের ৭ কোম্পানিতে আটক আছে ৪ ব্যাংকের ১,৬০০ কোটি টাকা

২০২৩ নভেম্বর ১৬ ১৬:৫৮:০৯
শেয়ারবাজারের ৭ কোম্পানিতে আটক আছে ৪ ব্যাংকের ১,৬০০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৭ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আটকে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে রাখা হয়েছে এবং বাকি অর্থ কল মানি মার্কেটের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

যে চার ব্যাংকের টাকা আটকে আছে, সেগুলো হলো- সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক।

আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা আটকে আছে, সেগুলো হলো- বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), এফএএস ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স ও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দাবি, তাদের এই বিনিয়োগের কারণ আকর্ষণীয় সুদের হার। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভুল বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আমানত রেখেছে ব্যাংকগুলো অথবা অনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য এটি করা হয়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমি জানি না, কেন ব্যাংকগুলো দুর্বল ব্যাংক বা ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাদের অর্থ রেখেছে। হয়তো রাজনৈতিক চাপ থাকতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর উচিত তাদের পরিস্থিতি যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থ রাখা।’

বিআইএফসি, এফএএস ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, আইএলএফএসএল, পিপলস লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স ও ইউনিয়ন ক্যাপিটালের কাছে ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্ট (এফডিআর) হিসেবে ৪০৯ কোটি টাকা রেখেছে অগ্রণী ব্যাংক।

একইসঙ্গে কল মানি মার্কেটের মাধ্যমে এফএএস ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, বিআইএফসি, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও প্রিমিয়ার লিজিংকে ৫১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি।

অগ্রণী ব্যাংক তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তারা এনবিএফআইয়ে রাখা অর্থ ফেরত পেতে চেষ্টা করছে। কিন্তু, প্রতিষ্ঠানগুলো মেয়াদপূর্তির পরও এফডিআরের অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না।

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা বেশিরভাগ এফডিআর থেকে তারা ঠিকভাবে সুদ পাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি কিছু ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজেদের সমস্যার কারণে তারা টাকা দিতে পারছে না।

তিনি বলেন, একটি বিশেষ পরিস্থিতির কারণে পদ্মা ব্যাংকে বিনিয়োগ করা হয়েছিল এবং সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংককে বিনিয়োগ করতে হয়েছিল।

তবে, ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাবঅর্ডিনেট বন্ডে বিনিয়োগ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো নিয়মিত সুদ পাচ্ছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক এই গবেষণা পরিচালক বলেন, বর্তমান সংকটে পড়ার আগে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করছিল। তাদের ব্যবসাও ভালো ছিল।

তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করে সমস্যায় পড়েছেন, কিছু প্রতিষ্ঠান খারাপ করায় এই খারাপ ভাবমূর্তি পুরো সেক্টরকে প্রভাবিত করেছে। ফল, কিছু ভালো ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও সংকটে পড়েছে। ফলে অনেক ব্যাংকের এফডিআর এসব প্রতিষ্ঠানে আটকে গেছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশের ৩৫টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি রেড জোনে ছিল, ২০২১ সালে যা ছিল ১২টি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুনে এনবিএফআই খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো সাধারণত কোনো দুর্বল প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বা তহবিল রাখতে চায় না। কিন্তু, কখনো কখনো পরিচালকদের প্রভাব বা রাজনৈতিক চাপের কারণে এটা করতে হয়।

তিনি বলেন, অনেক সময় শীর্ষ কর্মকর্তারাও সুবিধার বিনিময়ে দুর্বল প্রতিষ্ঠানে অর্থ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সুতরাং, এখানে কঠোর তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার। তিনি মন্তব্য করেন, এনবিএফআই সেক্টরের দুর্দশার মূলে আছে বড় ধরনের অনিয়ম।

২০২০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শনে পিপলস লিজিং, আইএলএফএসএল, প্রিমিয়ার লিজিং, উত্তরা ফাইন্যান্স ও ফার্স্ট ফাইন্যান্সসহ এক ডজন এনবিএফআইয়ের ব্যাপক অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির তথ্য উঠে আসে।

রূপালী ব্যাংক কয়েকটি এনবিএফআইয়ে এফডিআর খুলে ৫৬৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া পদ্মা ব্যাংকে ১১০ কোটি টাকা ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে ১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার এফডিআর আছে রূপালী ব্যাংকের।

সোনালী ব্যাংক পদ্মা ব্যাংকে ২৪০ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে সাড়ে ১৪ কোটি টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৬৪ কোটি টাকা রেখেছে।

জনতা ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে পদ্মা ব্যাংকে ১৯০ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে ১৪ কোটি টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২৫৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

শেয়ারনিউজ, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে