ঢাকা, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

কারসাজির হাওয়ায় উড়ছে রহিমা ফুডের শেয়ার

২০২৫ জুলাই ৩০ ১৬:২৫:১৫
কারসাজির হাওয়ায় উড়ছে রহিমা ফুডের শেয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রহিমা ফুডের শেয়ারের দামে অস্বাভাবিক উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। কোম্পানিটির আর্থিক পারফরম্যান্স এবং সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে।

গত ৩ মে রহিমা ফুডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৪ টাকা ২০ পয়সায়। পরদিন ৪ মে, কোম্পানিটির ২০২৫ অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ পয়সায়, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকে ছিল ২৪ পয়সা। আয়ের এই পতনের খবরে বাজারে চাপ তৈরি হয় এবং শেয়ারটির দর দ্রুত কমে ৬৮ টাকার নিচে নেমে যায়।

কিছুদিন পর শেয়ারটির দাম আবার চাঙ্গা হয়ে উঠে এবং ৯০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছালে কোম্পানিটির নারিকেল তেল উৎপাদন ইউনিট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা আসে। এমন নেতিবাচক খবরের প্রভাবে শেয়ারটির দামে আবারও ধাক্কা লাগে। শেয়ারটি টানা পতন হয়ে ৮০ টাকার কাছাকাছি নেমে যায়।

তবে ৭ জুলাই থেকে আকস্মিকভাব রহিমা ফুডের শেয়ারে তেজিভাব পরিলক্ষিত হয়। এই সময়ে বেশ কয়েক দিন শেয়ারটি বিক্রেতা সংকটে পড়ে হল্টেড থাকতেও দেখা যায়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের কাছে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ জানা নেই। এই ধরনের জবাব পরিস্থিতিকে আরও রহস্যময় করে তোলে।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষের এমন বক্তব্যের পর শেয়ারটি দামে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা চাপ পড়ে। কিন্তু দুই-তিন দিন বিরতি দিয়ে শেয়ারটির দাম আবারও ছুটতে থাকে। এবার যেন শেয়ারটি আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। শেয়ারবাজারে সার্বিকভাবে ধারাবাহিক পতনে থাকলে রহিমা ফুডের শেয়ার যেন সোনার হরিণ হয়ে যায়। ঊর্ধ্বশ্বাসের ধারায় শেয়ারটি অদম্য হয়ে যায়। সেই ধারায় আজও শেয়ারটি ঝলক দেখিয়ে বছরের সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড গড়ে। আজ শেয়ারটি ১৪৮ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত লেনদেন হয়। যা গত ৫২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্। তবে দিনশেষে ক্লোজিং হয় ১৪৪ টাকা ৮০ পয়সায়। এটিও গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ক্লোজিং দর।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারটির দাম কোনভাবেই স্বাভাবিক নয় ; এমন মূল্যবৃদ্ধি স্পষ্টতই কারসাজির ফল। কোম্পানিটির দুর্বল আর্থিক অবস্থা, উৎপাদন ইউনিট বন্ধের ঘোষণা এবং কর্তৃপক্ষের "অজ্ঞতা" প্রকাশ - এই সব কিছুই ইঙ্গিত দেয় যে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কৃত্রিমভাবে শেয়ারটির দাম বাড়িয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে।

রহিমা ফুডের শেয়ারে বিনিয়োগ বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারটির বর্তমান মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ৪১৭.৬৯, যা বিনিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ একটি অবস্থা। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এ ধরনের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণত কারসাজিরই ইঙ্গিত দেয়, যার চূড়ান্ত পরিণতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই শেয়ারবাজারের সামগ্রিক সুস্থতার স্বার্থে রহিমা ফুডের শেয়ারের দাম ও লেনদেনে কোনো অস্বাভাবিক কারসাজি রয়েছে কিনা, তা অবিলম্বে খতিয়ে দেখা দরকার।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে