ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Sharenews24

ব্যাংকের মতো দুর্বল বীমা কোম্পানিরও নিয়ন্ত্রণ নেবে সরকার

২০২৫ জুন ২৬ ১২:১৮:৪১
ব্যাংকের মতো দুর্বল বীমা কোম্পানিরও নিয়ন্ত্রণ নেবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বীমা খাতের দুর্বলতা দূর করতে এবং পলিসিধারীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যাংক খাতের মতো বীমা খাতেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। ব্যাংক খাতের আদলে এবার দুর্বল বীমা কোম্পানিগুলোর সাময়িক মালিকানা গ্রহণের ক্ষমতা পাবে সরকার। এই লক্ষ্যে 'বীমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫'-এর একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে সরকার প্রয়োজনে কোনো সমস্যাগ্রস্ত বীমা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা গ্রহণ করে তা তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দিতে পারবে।

খসড়া অধ্যাদেশের আওতায় ইতিমধ্যেই রেজল্যুশন বা নিষ্পত্তির জন্য ১৫টি সমস্যাগ্রস্ত বীমা কোম্পানিতে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ করেছে আইডিআরএ। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সাময়িক মালিকানা গ্রহণ করতে পারে। এই ১৫টি জীবন বীমা কোম্পানিতে গ্রাহকদের প্রায় ৪ হাজার ৬১৫ কোটি টাকার বীমা দাবি আটকে আছে, যার মধ্যে ৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা এখনও অপরিশোধিত রয়েছে।

কোম্পানিগুলো হলো: সানফ্লাওয়ার লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, সানলাইফ, পদ্মা ইসলামী লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ, বেস্ট লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, যমুনা লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, স্বদেশ লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, বায়রা লাইফ এবং এনআরবি ইসলামিক লাইফ। আইডিআরএ এই কোম্পানিগুলোর ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরের বিশেষ নিরীক্ষা করাচ্ছে এবং নিয়োগকৃত অডিট ফার্মগুলোকে আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হবে।

এই অধ্যাদেশের খসড়ায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেগুলো হলো-

মালিকানা গ্রহণ ও হস্তান্তর

সরকার এবং আইডিআরএ প্রয়োজন অনুসারে কোনো বীমা কোম্পানিকে অবসায়ন (liquidate) করতে পারবে, একীভূত করতে পারবে অথবা তৃতীয় পক্ষের কাছে তার সম্পূর্ণ বা আংশিক শেয়ার বিক্রি করতে পারবে।

কর্মকর্তা অপসারণ ও প্রশাসক নিয়োগ

বিদ্যমান বীমা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীসহ অন্য কর্মীদের অপসারণের ক্ষমতা আইডিআরএ'র থাকবে। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানের অবস্থার উন্নতির জন্য আইডিআরএ প্রশাসক নিয়োগ বা অন্য যেকোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।

ব্রিজ বীমাকারী প্রতিষ্ঠান গঠন

কোনো বীমা কোম্পানির মালিকানা তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির আগে এক বা একাধিক 'ব্রিজ বীমাকারী প্রতিষ্ঠান' গঠন করতে হবে। সাধারণত এর মেয়াদ দুই বছর হবে, তবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য একটি পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহী নিয়োগ করা হবে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নিয়ে তহবিল গঠন করা হবে।

গ্রাহক সুরক্ষা তহবিল ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল: গ্রাহকদের সুরক্ষায় একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হবে, যা বীমা প্রতিষ্ঠান নিষ্পত্তিতে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া, বীমা খাতের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই কাউন্সিলের উদ্দেশ্য হবে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বীমা খাতের পদ্ধতিগত সংকট চিহ্নিত করে তার সমাধান করা।

ক্ষতিপূরণ ও উদ্দেশ্য

এই অধ্যাদেশে শেয়ারধারক ও পাওনাকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের চেয়ে ভিন্ন (সেখানে শুধু আমানতকারীর ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়)। আর্থিক খাতে আস্থা ফেরানো এই অধ্যাদেশের অন্যতম লক্ষ্য। কোন বীমা কোম্পানি নিষ্পত্তি করা হবে, তা নির্ধারণ করা হবে সম্পদের গুণগত মান যাচাইয়ের মাধ্যমে তাদের প্রকৃত অবস্থা উদ্ঘাটন করে।

আইডিআরএ আগামী সপ্তাহে এই অধ্যাদেশের খসড়াটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে, যাতে বিভিন্ন পক্ষ মতামত দিতে পারে। এরপর দ্রুততম সময়ে এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। আইডিআরএ'র একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই অধ্যাদেশের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো পলিসিধারীর স্বার্থ রক্ষা এবং সময়মতো দাবি নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা।

উল্লেখ্য, বীমা আইন-২০১০ অনুযায়ী একটি পলিসির মেয়াদ পূর্তির ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তি করার কথা থাকলেও অনেক কোম্পানি এটি মানছে না। ফলে ৩২টি জীবন বীমা কোম্পানিতে ১১ লাখের বেশি গ্রাহকের প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার দাবি আটকে আছে। নতুন অধ্যাদেশটি খাতটির গভীর সমস্যা সমাধানে এবং এখাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে