ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

ছড়া লিখে কড়া শাস্তির মুখে উপসচিব

২০২৫ এপ্রিল ১০ ০৯:১৭:২৪
ছড়া লিখে কড়া শাস্তির মুখে উপসচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা ওয়াসার কমন সার্ভিস বিভাগের উপসচিব শহিদুল ইসলাম সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছড়া লিখে শাস্তির মুখে পড়েছেন। ছড়াটি তিনি ঈদুল ফিতরের দিন পোস্ট করেন, যা রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী ঈদ শোভাযাত্রার নাসিরুদ্দিন হোজ্জা চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছিল। ছড়াটি পোস্ট করার পর ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকে ডেকে পাঠিয়ে তার লেখা সম্পর্কে জানতে চান এবং পরে তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে সরিয়ে দেওয়া হয়।

শহিদুল ইসলাম জানান, ছড়া লেখাটা তার পুরোনো অভ্যাস, যা তিনি মাঝে মাঝে ফেসবুকে পোস্ট করতেন। তিনি বলেন, “ছড়াটি কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে লিখিনি। শুধুমাত্র হাস্যরসাত্মকভাবে কিছু লেখালেখি করেছিলাম।” ছড়াটিতে গাধার পিঠে বসে থাকা নাসিরুদ্দিন হোজ্জার চরিত্রকে রসাত্মকভাবে তুলে ধরা হয়েছিল, যা অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা করে। তবে তিনি বলেন, ছড়ার মধ্যে সরকার বা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অপমান বা সমালোচনা ছিল না, শুধুমাত্র রসিকতার জন্য লেখা হয়েছিল।

এ ঘটনা ঘটার পর, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, "সরকারি চাকরিজীবীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ব্যাপারে কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। শহিদুল ইসলামের ছড়ায় এসব নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটেছে, যার কারণে তাকে শাস্তি হিসেবে ওএসডি করা হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, ওয়াসা সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তার প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ছড়ায় যা আছে

নাসিরুদ্দিন হোজ্জা

পেয়ো নাকো লজ্জা

ঘোড়ায় চড়িয়া তুমি হাঁটিয়া চলো

রসিকতায় শত কথা সত্যি বলো

গাঁধা নাকি ঘোড়া সে

কি করে কে বলে যে

গাঁধা হাঁটে চার পায়ে টগবগ

তোমার মত নয় সে অযথাই বকবক

কেউ বলে তুর্কি কেউ বলে ইরানী

কখনও কি স্বাদ পেলে সুলতানী বিরানী

ঈদ এলে হেঁটেছ কি মুঘলের ঢাকাতে

কাণ্ড কি ঘটিয়েছ অযথাই হাসাতে

বহুকাল বাদে আজ তুমি দেখা দিলে

ঢাক ঢোলের তালে তালে

গাঁধার পশ্চাতে মুখ করে চলিলে উল্টো

আজব এক ঈদ গেলো ঘটনাটি ভুল তো?

যাই হোক জানি কম নাসিরুদ্দিন হোজ্জা

এতে তুমি পেয়ো না গো এতটুকু লজ্জা।

ছড়ায় নাসিরুদ্দিন হোজ্জার চরিত্রকে তুলে ধরে, গাধার পিঠে বসে থাকা এই ঐতিহাসিক চরিত্রের মাধ্যমে একটি হাস্যরসাত্মক পরিস্থিতি বর্ণিত হয়েছে। ছড়াটির মূল বিষয় ছিল, হোজ্জা একেবারে উল্টোভাবে বসে গাধার পিঠে ভ্রমণ করছেন এবং তার অদ্ভুত আচরণ নিয়ে রসিকতা করা হচ্ছে। তবে এই ছড়ায় সরকারের বা কোনো ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে তেমন কোনো সমালোচনা ছিল না, বরং এটি ছিল এক ধরনের রসাত্মক উপস্থাপনা।

বাংলাদেশের অনেক সাহিত্যিক এবং কবি এ ঘটনার পর শহিদুল ইসলামের পক্ষে কথা বলেছেন। কবি মোহন রায়হান বলেন, "বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা বাকস্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি, এবং আজও আমাদের সাহিত্যিকদের স্বাধীনভাবে লেখার অধিকার রয়েছে। আমি মনে করি না শহিদুল ইসলামের ছড়ায় কোনো রকম অপমান বা সমালোচনা ছিল।"

এছাড়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক মইনুল ইসলাম জানান, "শহিদুল ইসলামের ছড়া লেখার কারণে তার শাস্তি প্রদান করা উচিত নয়। এটি সৃষ্টিশীলতা এবং সাহিত্যের প্রতি একটি আঘাত হতে পারে।"

অর্থনীতিবিদ এবং গবেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের উপর আরও কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হতে পারে, যা সৃষ্টিশীলতা এবং ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশের স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে সরকার এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি এমন আচরণ ভবিষ্যতে সাহিত্যিক এবং লেখকদের জন্য একটি ভয়ঙ্কর বার্তা হতে পারে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে একাধিক সাহিত্যিক ও কবি সরকারি চাকরির সাথে যুক্ত থেকেও সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেছেন, এমনকি ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করেও কবিতা ও গল্প লিখেছেন। কিন্তু, শহিদুল ইসলামের ছড়া লেখাকে কেন্দ্র করে ওয়াসার এমন সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। অতীতে অনেক কবি, সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সাহিত্যে মতামত প্রকাশ করেছেন, যা পরবর্তীতে অনেক সময় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

আরিফ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে