ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীরা ক্ষতিপূরণ হিসাবে যা পাচ্ছেন

২০২৪ জুলাই ১৬ ১১:৫০:০০
মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীরা ক্ষতিপূরণ হিসাবে যা পাচ্ছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও যেতে না পারা কর্মীদের ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

টাকা জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র দেখানো সাপেক্ষে এই অর্থ ফেরত পাবেন তাঁরা। তবে যে পরিমাণ টাকা ফেরতের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তা মোট খরচের তুলনায় খুবই নগণ্য।

মালয়েশিয়ায় যেতে যারা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন তারা জানিয়েছেন, দেশটিতে যাওয়ার জন্য তারা ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ করেছেন। মধ্যস্বত্বভোগী দালাল ও এজেন্সির প্রতিনিধিরা তাঁদের কাছ থেকে এই পরিমাণ অর্থ আদায় করেই ভিসা ও টিকিট সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেন।

কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে তাঁরা রসিদ পেয়েছেন মাত্র ৭৯ হাজার টাকা জমার। ফলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে।

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে, মালয়েশিয়ার সরকারি সিস্টেমে ক্লিয়ারেন্সের জন্য রিক্রুটিং এজেন্টকে কর্মীপ্রতি ১০০ রিঙ্গিত দিতে হয়েছে। তবে মূল সমস্যা ভিসা-বাণিজ্য। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে প্রতিটি ভিসা ৪ থেকে ৫ হাজার রিঙ্গিত দিয়ে কিনতে হয়েছে; যা বাংলাদেশি টাকায় গড়ে ১ লাখের বেশি। এ ছাড়া মালয়েশিয়ান প্ল্যাটফর্মের জন্য দিতে হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

অন্যদিকে চুক্তি অনুযায়ী, যাতায়াতের বিমানভাড়া নিয়োগকর্তার বহন করার কথা থাকলেও বাস্তবে সেটি কর্মীদেরই বহন করতে হয়েছে; যা গত এপ্রিল ও মে মাসে লাখ টাকা পেরিয়ে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে অভিবাসন ব্যয় পৌঁছায় ৬ লাখ টাকার বেশি।

জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, একেবারে শেষ পর্যায়ে বেশ কিছু ই-ভিসা ইস্যু হওয়া ও ফ্লাইটের স্বল্পতায় অনেকে যেতে পারেননি। তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় যাঁরা যেতে পারেননি, তাঁদের পুরো অর্থ ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়াটি জটিল। কারণ দেশটির সিস্টেমের কারণে অভিবাসন ব্যয়গুলো বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সি একজন কর্মীকে পাঠানোর জন্য সরকার-নির্ধারিত ৭৯ হাজার নিয়েছে। অন্যান্য খাতে যে খরচ হয়েছে, সেটি ফেরত আনার সুযোগ এজেন্সির নেই।

মালয়েশিয়ায় যেতে না পারার কারণ খুঁজতে গত জুনে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৫ লাখ ৩২ হাজার ১৬২ জন কর্মীকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিএমইটির ছাড়পত্র পান ৪ লাখ ৯৩ জন। আর শেষ পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৬ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে সক্ষম হন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও ১৭ হাজার ৭৭৭ হাজার জন কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি।

নির্ধারিত ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির কারও ১০ জন, কারও ৫০ জন, কারও ৫০০ জন, কারও ৪০০ জন কর্মী যেতে পারেননি। এর মধ্যে প্রমাণপত্রসহ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন যেতে না পারা ২ হাজার ২৫ জন কর্মী।

সরকারি হিসাবমতে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও মালয়েশিয়ায় যেতে না পারার কারণে কর্মীরা যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন, তার পরিমাণ টাকার অঙ্কে ৮০০ কোটির বেশি।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘যেসব কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। বায়রা ১৫ দিন সময় চেয়েছে। আমরা বলেছি, আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে। এই সময়ের মধ্যে যারা টাকা দিতে পারবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে চলতি মাসের শেষের দিকে কুয়ালালামপুরের সঙ্গে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের কথা রয়েছে। বৈঠকে পুনরায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়টি তুলে ধরবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। আর বাজার খুললে যাঁরা যেতে পারেননি, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী আছেন। গত বছর সেখানে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন কর্মী। এই বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গেছেন ৪৪ হাজার ৭২৭ জন।

মালয়েশিয়ায় চার বছর পর ২০২২ সালে শ্রমবাজার খুলেছিল। মালয়েশিয়া সরকার গত মার্চেই ঘোষণা করে, ৩১ মের পর আর কোনো নতুন বিদেশি শ্রমিক দেশটিতে ঢুকতে পারবেন না। সে হিসাবে গত ১ জুন থেকে আবার বন্ধ হয়েছে দেশটির শ্রমবাজার।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে