ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

নিউইয়র্কের ওজন পার্কের নিরাপত্তার দাবিতে সমাবেশ

২০২৪ মে ২৪ ১৫:১০:০২
নিউইয়র্কের ওজন পার্কের নিরাপত্তার দাবিতে সমাবেশ

প্রবাস ডেস্ক : নিউইয়র্কের ওজন পার্ক এলাকায় একের পর এক বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা, দোকানে চুরিসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় মানুষ আতঙ্কিত। কোথায় নিরাপত্তা পাবেন তা নিয়ে চিন্তিত।

অপরাধীরা দ্রুত ধরা না পড়ার কারণে এই আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে। আবার ধরা পড়লেও জামিন পাওয়ার কারণেও ভয় কাটছে না। বাংলাদেশি কমিউনিটির একাধিক মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এসব বিষয়ে যে ধরনের সচেতনতা দরকার, সেটি হচ্ছে না।

সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে মেইন স্ট্রিমকে বোঝাতে হবে বাংলাদেশি কমিউনিটি একটি বড় শক্তিতে পরিণত হচ্ছে এবং এদেরও গুরুত্ব রয়েছে, সেটা সেভাবে না হওয়ার কারণে অন্যান্য কমিউনিটির কাছ থেকে সেভাবে সহায়তা মিলছে না।

কমিউনিটিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, পিকনিক, ক্রুস, পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠান যত সংখ্যক হয়, সেভাবে কমিউনিটির মানুষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে না।

কমিউনিটির গুটি কয়েক মানুষ সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য ও অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ করছেন। তারা চাইছেন কমিউনিটির সবাই ঐক্যবদ্ধ হোক। সম্মিলিতভাবে সবাই এগিয়ে আসুক।

অপরাধীদের ধরিয়ে দিতে পুলিশকে সহযোগিতা করুক এবং কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটলে তারা সে বিষয়ে তথ্য থাকলে দিতে পারে, যাতে করে অপরাধীরা ধরা পড়ে। পাশাপাশি প্রতিবাদ সমাবেশগুলোতে কমিউনিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের উপস্থিতি দরকার। আসলে ঐক্যবদ্ধভাবে না হওয়ার কারণেই অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখা যাচ্ছে না।

নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ রয়েছে। ৯১১-এ কল করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে- এমনটা ধারণা করলেও এখন তা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ অপরাধীকে ধরার পর জামিনে বের হয়ে আসছে। ফলে অপরাধীরা আবার অপরাধ করছে।

এদিকে নিজে পুলিশে কল করার পর নিজ বাসায় পুলিশের গুলিতে উইন রোজারিও নিহত হওয়ার পর অনেকেই ভয় পেয়ে গেছেন। চিন্তা করছেন পুলিশ ডাকলে না জানি আবার কী সমস্যা হয়।

গত মাসে উডসাইডে আবার একজন ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পুলিশ ডেকেছিলেন। পুলিশ ডাকার পর বাড়িওয়ালা তার বিরুদ্ধে আগে অভিযোগ দেওয়ার কারণে ভাড়াটিয়া পুলিশ ডাকলেও বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা বলার পর ভাড়াটিয়াকেই আটক করে।

নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় আবারও দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হয়েছেন এক বাংলাদেশি। গত ১৭ মে বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তির নাম খোরশেদ আলম রিংকু। গত ১২ মে সন্ধ্যায় ‘জারা লাইফস্টাইল’ নামক একটি মানি রেমিট্যান্স ও পোশাক বিক্রির স্টোরে অস্ত্রের মুখে তার কাছ থেকে নগদ অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।

এর আগে পুলিশের গুলিতে নিহত হন উইন রোজারিউ, এর আগে জ্যামাইকাতে এক দুর্বৃত্তের ধাক্কায় আহত হন জাকের হুসাইন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। জ্যামাইকাতে নিজ রেস্টুরেন্টের সামনে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন কয়লা রেস্টুরেন্টের ব্যবসায়ী। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটার কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।

জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ঘটলেও সব ঘটনায় অপরাধী অনেক ক্ষেত্রে ধরা পড়ছে না। আবার ধরা পড়লেও জামিনে বের হয়ে আসছে। আগে জামিন পাওয়া অনেক কঠিন ছিল। এখন জামিন দ্রুত হয়, ফলে অপরাধীরা ভয় পাচ্ছে না।

আবার পুলিশকে যে ধরনের সহায়তা করার দরকার অপরাধীদের ধরার জন্য ও অপরাধ দমনের জন্য সেটি হচ্ছে না। কেবল পুলিশ কাজ করছে না- এমনটা বললে হবে না। আমাদের উচিত হলো পুলিশের কাছে যাওয়া, তাদেরকে বলা। পারলে অপরাধীকে ধরার জন্য যেসব তথ্য জানা আছে, তা দেওয়া।

তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ দমনের জন্য ও হামলার ঘটনা বন্ধ করার জন্য প্রতিবাদ সমাবেশ করছি। অন্য সব অনুষ্ঠানে যত নেতৃবৃন্দ থাকেন, সেখানে তত আসেন না। এসব ঘটনা বন্ধ করতে হলে অবশ্যই কমিউনিটির সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আর পারিবারিক দ্বন্দ্ব-বিবাদসহ সহিংসতার ঘটনাও যাতে বন্ধ হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যদি মূলধারার কাছে তুলে ধরতে পারি যে আমরা একটি বড় কমিউনিটি, আমাদের অনেক ভোট রয়েছে, আমরা ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছি, তাহলে মূলধারা আমাদের গুরুত্ব দেবে।

এদিকে কমিউনিটির নিরাপত্তার দাবিতে সমাবেশ করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ওজোনপার্কের ‘লিটল বাংলাদেশ ওয়ে’তে গত ১৭ মে ওজোনপার্ক বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে আয়োজিত এই বিক্ষোভ সমাবেশে সর্বস্তরের প্রবাসীরা অংশ নেন। তাদের অনেকে সিটি প্রশাসনের সমালোচনা করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

গত ১২ মে সন্ধ্যায় ‘জারা লাইফস্টাইল’ নামক একটি মানি রেমিট্যান্স ও পোশাক বিক্রির স্টোরে অস্ত্রের মুখে নগদ অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নেওয়ার ঘটনার সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও দুর্বৃত্ত গ্রেফতার না হওয়ায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন প্রবাসীরা। এ ছাড়া এ এলাকায় প্রায়ই প্রবাসীরা দুর্বৃত্তের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

সমাবেশে ওজোনপার্ক বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি খায়রুল কবির খোকন বলেন, আমাদের ট্যাক্সে চলছে প্রশাসন। অথচ নিরাপত্তা প্রদানে চলছে সীমাহীন গড়িমসি। বারবার আবেদন জানিয়েও সাড়া মেলেনি পুলিশের টহল বৃদ্ধির।

এ ছাড়া সমাবেশে কমিউনিটি লিডার মিসবাহ আবদিন, আল আমান মসজিদের সভাপতি মোহাম্মদ কবির চৌধুরী, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আনোয়ার খান, বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক সেক্রেটারি ও কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, বোরহানউদ্দিন কপিল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা অভিযোগ করেন, সন্ধ্যার পর ওজোনপার্কের অনেক রাস্তায় লাইট থাকে না। অন্ধকারে পথচলার সময় অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। দিনের বেলায় পুলিশের টহল একেবারেই কম থাকায় নির্জন এলাকায় দুর্বৃত্তরা হামলে পড়ছে সহজ-সরল প্রবাসীদের ওপর। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় দিনই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা।

বক্তাদের অভিযোগ, পুলিশের জরুরি সেবা সার্ভিস ৯১১-এ কল করলেও সাড়া পাওয়া যায় না অধিকাংশ সময়। অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়, ‘এটা আমাদের এলাকার মধ্যে নয়, তাই আবার ফোন করুন।’ এ ধরনের অজুহাত দেখানো হচ্ছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। সিটি মেয়র অফিস, সিটি কাউন্সিল ও স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যানদের সঙ্গে দেন-দরবার করেও সাড়া মেলেনি।

নেতারা আশা করেন, শিগগিরই ওজোনপার্ক এলাকায় একটি পুলিশ পোস্ট বসানো হবে। সেখানকার পুলিশ অফিসাররা ঘন ঘন টহল দিলে নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় কেটে যাবে।

সমাবেশে এসেছিলেন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-৩২ এর কাউন্সিলওম্যান জুয়ান এরিয়োলা। তিনি বলেন, আমার এলাকাও এটি। তাই আমি অন্যদের মতো পাশ কাটাতে চাই না। লাইটপোস্ট যাতে আলোকিত থাকে, পুলিশের টহল যাতে বাড়ানো হয়- সে ব্যাপারে শিগগিরই আমি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করব।

এছাড়া একটি পুলিশ পোস্ট স্থাপনের বিষয়েও কথা বলব। এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধানে আমরা সংকল্পবদ্ধ। এ নিয়ে কালক্ষেপণের অবকাশ থাকতে পারে না। ওজোনপার্ক এলাকাটি তিনটি পুলিশ স্টেশনের সংযোগস্থল হওয়ায় একটি স্টেশনের পুলিশ আরেক স্টেশনের ওপর দায় চাপানোর যে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, সেটি বন্ধ করতেও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলব।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল খান, জারা লাইফস্টাইলের মালিক রাজু আহমদ প্রমুখ।

এ ছাড়া নিউইয়র্কে প্রায় এক মাস আগে দুর্বৃত্তের ধাক্কায় নিহত বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক জাকির হোসেন খসরুর (৭৬) হত্যার ঘটনায় ঘাতক গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা। গত ৫ এপ্রিল জ্যামাইকার ১৬৭ স্ট্রিট এবং হিলসাইড অ্যাভিনিউর কর্নারে দুর্বৃত্তের আঘাতে আহত হন জাকির হোসেন খসরু। আহত হওয়ার ৫ দিন পর ১০ এপ্রিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এ ঘটনার প্রতিবাদ ও প্রবাসীদের নিরাপত্তা চেয়ে ১২ মে রোববার জ্যামাইকায় বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে শেরপুর জেলা সমিতি এবং জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার এবং শেরপুর জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান।

শেরপুর জেলা সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা আর কোনো প্রবাসীকে এভাবে হারাতে চাই না। আমরা চলতি পথে নিরাপত্তা চাই।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন তদন্তকারী পুলিশ স্টেশনের কমান্ডিং অফিসার ক্যাপ্টেন টিস্যাঙ। খসরুর সন্দেহভাজন ঘাতকের ব্যাপারে পুলিশ ‘পুরোপুরি নিশ্চিত’ হতে না পারলেও যেকোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান তিনি।

তদন্তকারী এ পুলিশ কর্মকর্তা খসরুর স্ত্রী শামিমা আকতার শিউলিকে বিচারের আশ্বাস দেন। ঘাতক মাস্ক পরা থাকায় তাকে চিহ্নিত করতে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কমিউনিটি নেতা ওসমান গণি, যুক্তরাষ্ট্র সফররত শেরপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া লিটন, বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রিন্স আলম, সাধারণ সম্পাদক রাশেকুল মালিক এবং জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের পেশ ইমাম মীর্জা আবু জাফর বেগ।

ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, ২০২২ সালের ১১ মে এই একই স্থানে ভরদুপুরে ছিনতাইকারী এক দুর্বৃত্তের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন ভূইয়া। তারও আগে প্রায় একই এলাকায় আরও কয়েকজন প্রবাসী আক্রান্ত হয়েছেন। এ জন্য এ এলাকার পথচারীদের নিরাপত্তা জোরদারের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, আমি কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি বরাবর আকুল আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে খসরুর ঘাতককে গ্রেপ্তারের পর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য।

এ ছাড়া গত ২৭ মার্চ ওজোনপার্কে বাংলাদেশি নাগরিক উইন রোজারিও (১৯) হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।

শেয়ারনিউজ, ২৪ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে