ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

খতিয়ে দেখা হচ্ছে সাউথইস্ট ব্যাংকের বিনিয়োগ

২০২৪ মার্চ ০৭ ২০:৩৬:২২
খতিয়ে দেখা হচ্ছে সাউথইস্ট ব্যাংকের বিনিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজারে আগে থেকেই ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে আসছে সাউথইস্ট ব্যাংক। এরপরও ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ নামে এক ব্রোকারেজ হাউস চেয়েছিল সাউথইস্ট ব্যাংক তাদের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করুক।

প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি এই তহবিল চেয়ে আবেদন করেছিল। সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এক পক্ষ এ নিয়ে আপত্তি জানালেও শেষ পর্যন্ত ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকটি।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে পর্ষদের দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের বিষয়টি জানতে পেরে ইউনাটেড সিকিউরিটিজের অনুকূলে অর্থ ছাড় বা শেয়ার কেনা আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে দুই সপ্তাহ ধরে সাউথইস্টের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশদ পরিদর্শন চলছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কার্যক্রম ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নিজস্ব মার্চেন্ট ব্যাংক থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকটি কেন সরাসরি অন্য ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি করছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ ছাড়া শেয়ারবাজারে ব্যাংকটির বিনিয়োগের নিয়মকানুন মানা হয়েছে কি না, ব্যাংকের শেয়ার বেচাকেনার মাধ্যমে পরিচালক বা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কেউ ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন কি না, কয়েক বছর আগে ইএম পাওয়ার নামে কোম্পানির প্রাইভেট প্লেসমেন্টের সাড়ে ২২ কোটি টাকার সন্দেহজনক বিনিয়োগ এবং পরবর্তী সময়ে তা সমন্বয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিদর্শন চলছে।

পুরো পরিদর্শন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বরাবর একটি প্রতিবেদন দেবে তদন্ত দল। সে আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে, ২৩ জানুয়ারি সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের সঙ্গে আগাম সমঝোতার ভিত্তিতে ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ তহবিল চেয়ে আবেদন করে। ব্রোকারেজ হাউসটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাজীব আল মামুনের স্বাক্ষরে আবেদনটি করা হয় ব্যাংকের এমডি বরাবর।

আবেদনে সাউথইস্ট ব্যাংককে ‘প্রিমিয়াম ক্লায়েন্ট’ হিসেবে প্রতি ১০০ টাকার শেয়ার কেনাবেচার জন্য সব ধরনের খরচসহ মাত্র ২৫ পয়সা হারে বিশেষ ব্রোকারেজ কমিশন চার্জ নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

এর পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় প্রস্তাবটি উঠলে তা অনুমোদিত হয়। যদিও সেখানে কোনো টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। শুধু ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরসহ একটি পক্ষ চেয়েছে, এখন থেকে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের অধিকাংশই পরিচালিত হবে ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের মাধ্যমে। বর্তমানে অন্য কোম্পানির মাধ্যমে বিনিয়োগ হচ্ছে।

এ নিয়ে দু’পক্ষের স্বার্থের দ্বন্দ্বের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি অভিযোগ আসে। এর পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকটিকে চিঠি দিয়ে ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের অনুকূলে কোনো অর্থ ছাড় না করা এবং কোনো শেয়ার না কেনার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ ছাড়া ওই দিন থেকে বিশেষ একটি পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শুরুতে ইউনাইটেড সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ অনুমোদনে বিধি লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, দেখা হচ্ছিল। তবে এখন তা অন্যদিকে মোড় নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাউথইস্টে এবারই প্রথম শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, তেমন নয়। এর আগে ২০১৮ সালে ইএম পাওয়ার নামে একটি কোম্পানিতে প্রাইভেট প্লেসমেন্টে সাড়ে ২২ কোটি টাকার সন্দেহজনক বিনিয়োগ করে ব্যাংক। এ বিনিয়োগ নিয়ে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ থেকে আপত্তি দেওয়া হয়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইএম পাওয়ারের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন চাইলেও তা দিতে পারেনি সাউথইস্ট ব্যাংক।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পুরো সাড়ে ২২ কোটি টাকা বিনিয়োগ ‘কলব্যাক’ তথা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অর্থ ফেরত আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মানি লন্ডারিংসহ সন্দেহজনক বিনিয়োগের বিষয়ে তদন্ত করে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট-বিএফআইইউ। সংস্থাটি তদন্ত করে অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ পায়। এর পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তখন দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠায় বিএফআইইউ।

শেয়ারনিউজ, ০৭ মার্চ ২০২৪

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে