ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত শুরু

২০২৪ মার্চ ০৭ ১০:৪২:৩৭
পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক : পোশাক শ্রমিকদের মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন, কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ওয়াশিংটনে এ তদন্তের বিষয়ে একটি শুনানি হবে আগামী ১১ মার্চ। বাংলাদেশ মনে করছেন এই তদন্ত রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ করছে।

তিনি বলেন, এটিকে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা যেতে পারে। কারণ শুধু বাংলাদেশ নয়, মার্কিন বাজারে পোশাক রপ্তানিকারক শীর্ষ দেশগুলোতে এই তদন্ত শুরু করেছে ওয়াশিংটন।’

তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছি, তদন্ত যদি বস্তুনিষ্ঠ হয়, তবে সেটি তারা করতেই পারে।’

পররাষ্ট্র সচিব আশাবাদ ব্যক্ত রেখে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই তদন্তে যেন কোনো ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য না থাকে। শুনানির প্রস্তুতি রয়েছে এবং ওয়াশিংটনে তা তুলে ধরা হবে।

কূটনৈতিক একটি সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরে মার্কিন একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের অনুরোধে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নিয়ে তদন্ত শুরু করে মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন (ইউএসআইটিসি)। বাংলাদেশ ছাড়াও এই তদন্তের আওতায় পড়েছে কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান।

কূটনৈতিক সূত্রে আরো জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে এই পাঁচটি দেশ। কীভাবে এই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের বাজার দখল করে রেখেছে, তা এই তদন্তে খুঁজবে ইউএসআইটিসি। এখানে কোনো অসুস্থ প্রতিযোগিতা হচ্ছে কিনা, তা খুঁজে দেখা হবে।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সুস্থ প্রতিযোগিতার ভিত্তিতেই তৈরি পোশাকের বাজারে বর্তমান অবস্থান করে নিয়েছে। তবে তদন্তে যদি কোনো অনিয়ম উঠে আসে, তা অবশ্যই আমলে নেওয়া হবে।’

তবে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করে আসছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গত নভেম্বরের মাঝামাঝি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বৈশ্বিক শ্রমনীতি ঘোষণা করেন। সেখানে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, ভয়ভীতি দেখাবে এবং আক্রমণ করবে– তাদের ওপর বাণিজ্য ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। তাঁর ওই ঘোষণার পর বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সরকারকে একটি চিঠি দেওয়া হয়।

তবে গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফর করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার বলেন, ‘মার্কিন বৈশ্বিক শ্রমনীতি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। নীতিটি নেওয়া হয়েছে, যাতে বৈশ্বিকভাবে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করা যায়।’ তিনি বলেন, ‘শ্রম অধিকারের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করছে বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে, এর মধ্যে সহায়তাও রয়েছে।’ বাংলাদেশেও শ্রম পরিস্থিতি উন্নয়নে মার্কিন প্রকল্প রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, ওয়াশিংটনে মার্কিন ওই শুনানি শুরু হবে ৭ মার্চ। তবে বাংলাদেশের শুনানি হবে ১১ মার্চ। এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিজিএমইএ মৌখিক ও লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে। শুনানির পরও আগামী ২২ মার্চ পর্যন্ত লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ থাকবে। আগামী ৩০ আগস্ট ইউএসআইটিসি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম ইউনিয়ন এএফএল-সিআইও বেশ শক্তিশালী। তারা দেশে ও দেশের বাইরে প্রভাব বিস্তার করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীরা তাই শ্রম ইউনিয়নকে পক্ষে রাখতে চান। বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকারের বিষয়টিকে তাই যুক্তরাষ্ট্র জোর দিচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরে সরকারের সঙ্গে শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

শ্রম পরিবেশে সত্যিকারের উন্নয়ন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, সেই বার্তা সরকারকেও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শ্রমিকদের সমাবেশ করার ও ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা ও বিদ্যমান শ্রম আইন সংশোধন নিয়েও সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে উদ্বেগ তুলে ধরে মার্কিন প্রতিনিধি দল।

মার্কিন শুনানিতে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাংলাদেশ মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতাবিরোধী কোনো কাজ তো করছেই না বরং বাজারটিতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিযোগিতায় পড়েছে। বিশেষ করে উৎপাদন খরচ পাকিস্তান ও চীনের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি।

সেই সঙ্গে গত ডিসেম্বর থেকে শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা সেই অনুযায়ী পোশাকের মূল্য বাড়াচ্ছেন না।’ তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় তুলে ধরে ইতোমধ্যে মার্কিন কমিশনকে চিঠি দিয়েছি। আগামী ১১ মার্চ ভার্চুয়ালি এ শুনানিতে অংশগ্রহণ করব।’

তদন্তে শ্রম পরিবেশ ও সার্বিক পরিস্থিতি কমিশন দেখবে বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে, গত বছর শ্রমিক আন্দোলনের সময় শ্রমিক নিহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানায় দেশটি।

শেয়ারনিউজ, ০৭ মার্চ ২০২৪

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে