ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ই-সিগারেট বাজারে আনতে চায় বিএটি

২০২৩ নভেম্বর ১৭ ১২:০৭:২১
ই-সিগারেট বাজারে আনতে চায় বিএটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) সম্প্রতি বাংলাদেশে ভোক্তাদের আধুনিক জীবনধারার কথা উল্লেখ করে নতুন কিছু আন্তর্জাতিক মানের পণ্য আমদানির অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।

চিঠিতে কোম্পানিটি নতুন পণ্যের চাহিদা নিরূপণের পাশাপাশি দেশের বাজারে বিক্রি এবং পরে স্থায়ীভাবে এই পণ্যের উৎপাদন, পরিবেশন, বিপণন ও রপ্তানি করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

তবে দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন পণ্যের নাম দিয়ে কোম্পানিটি প্রকৃতপক্ষে দেশে ই-সিগারেট প্রস্তুত করার কৌশল নিয়েছে। তারা এই ধরনের ধোঁয়াশা দূর করার জোর দাবি জানিয়েছেন।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে আধুনিক পণ্য হিসেবে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস (ই-সিগারেট, ইলেকট্রিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম), ভ্যাপ বা এই জাতীয় পণ্যের প্রচার শুরু করে। কোম্পানিটি ‘এ বেটার টুমরো’ শ্লোগান নিয়ে যুক্তরাজ্যে ‘ভুজ’ ব্র্যান্ডের ই-সিগারেটের প্রচার করছে বলে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীদের অভিযোগ রয়েছে।

‘এ বেটার টুমরো’ যুক্তরাজ্যে ‘ভুজ’ ব্র্যান্ডের জন্য ট্রেডমার্ক নিবন্ধিত। বাংলাদেশেও তামাক কোম্পানিটি এ শ্লোগানের মাধ্যমে সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যার লক্ষ্য ই-সিগারেটের প্রসার ঘটানো এবং তরুণদের ই-সিগারেটে আসক্ত করা।

তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীদের অভিযোগ, সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। এরই মধ্যে সংশোধিত খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। নতুন আইনে ই-সিগারেটের প্রচার, প্রসার, আমদানি, রপ্তানি, পরিবেশন, বিপণন নিষিদ্ধের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

এরপর থেকে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন উপায়ে দেশে এসব ক্ষতিকর পণ্যের প্রচারণার জন্য নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করছে। ইতোমধ্যে বিএটি বহুজাতিক ইলেকট্রনিকস কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি করেছে বলে জানা গেছে।

এতে দেশের তামাকবিরোধী কর্মীরা উদ্বিগ্ন। তাদের অধিকাংশই ধারণা করছেন, ই-সিগারেট উৎপাদন ও প্রসারের লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম সংকটের কারণ হতে পারে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মী ও ঢাকা আহছানিয়া মিশনের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ই-সিগারেট বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের প্রায় ১৫০ জনের বেশি জনপ্রতিনিধি ই-সিগারেট বন্ধের সুপারিশ করেছেন এবং সরকার তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। এমতবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে না ই-সিগারেটের মতো পণ্যের অনুমোদন দেয়া।

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন সিগারেটের তুলনায় ই-সিগারেট কোনো দিক দিয়েই কম ক্ষতিকর নয়। কিন্তু তামাক কোম্পাগিুলো বিশ্বব্যাপী এর সপক্ষে বিভিন্ন মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।’ টোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্স সেলের সহযোগী অধ্যাপক বজলুল রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমদানিনীতি ই-সিগারেট নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের বিষয় থাকায় তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দেয়। আইন সংশোধন বিলম্বিত করার সুযোগে তামাক কোম্পানিগুলো ই-সিগারেট প্রসারে সুযোগ নিচ্ছে।

গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭-এর তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ০.০২ শতাংশ। তবে ২০১৭ সালের পর গত পাঁচ বছরে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

জনস্বাস্থ্য আইন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ই-সিগারেট বাজারজাত করতে তামাক কোম্পানিগুলো নানা কৌশল অবলম্বন করে। ফিলিপাইনের স্বাস্থ্য বিভাগ ই-সিগারেটের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন থাকায় সিগারেট কোম্পানিগুলো ফিলিপাইনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে সে দেশে ই-সিগারেটের প্রসার বৃদ্ধি করে এবং অল্প সময়ে সেটি দেশের তরুণ প্রজন্মের হাতে পৌঁছে যায়। পরে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট থেকে জানানো হয় এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত নয়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সুপ্রিক কোর্টের আপিল বিভাগের এক রায়ে দেশে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই রায়ে দেশে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের নতুন কোনো কোম্পানি অনুমোদন প্রদান না করা এবং বিদ্যমান তামাক কোম্পানিগুলোকে অন্য কোনো দ্রব্য ?উৎপাদনে সহযোগিতা না করার নির্দেশনা প্রদান করেছে। এমতাবস্থায় নতুন করে ই-সিগারেটের অনুমোদন প্রদান আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, ‘ই-সিগারেট যারা উৎপাদন করে তারা অনেকগুলো মিথ সচেতনভাবে মার্কেটে প্রচার করে। তাদের প্রথম মিথই হলো যে, ই-সিগারেট নিরাপদ, যা প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় কম ক্ষতিকর। কিন্তু আদতে তা নয়। ই-সিগারেটও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।’

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য (ব্যবহার) নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০৫ অনুসারে তামাক কোম্পানির সিএসআর এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্রচার নিষিদ্ধ। কিন্তু সিগারেট কোম্পানি গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবহার করে শুধু আইনভঙ্গই করছে না, ই-সিগারেট প্রমোশনের চেষ্টা করছে। গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে বিএটি বিভিন্ন নামে ই-সিগারেট প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করেছে এবং ঢাকায় প্রায় ৩০টিরও বেশি ই-সিগারেট দোকান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশেও তামাক কোম্পানিগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের মাধ্যমে দেশে ই-সিগারেটের ব্যবসার প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করছে বলে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা মনে করেন এবং তারা এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ই-সিগারেটের প্রচার ও প্রসার খুব বেশি বৃদ্ধি পায়নি। এমতাবস্থায় এটির লাগাম টেনে না ধরলে পরবর্তীতে আইন করেও একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মস্ত্রণালয় ই-সিগারেট নিষিদ্ধের প্রস্তাব করেছে। তবে তামাক কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর এবং এটি ধূমপান ছাড়তে সহায়ক হিসেবে তাদের প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে এবং অনেকের কাছে সেটি তুলে ধরছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ই-সিগারেটকে ধূমপান ত্যাগের সহায়ক নয় বরং ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে।

শেয়ারনিউজ, ১৭ নভেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে