ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

উৎপাদনের নামে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতারণা!

২০২৩ অক্টোবর ১৪ ১৮:২৫:৫০
উৎপাদনের নামে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতারণা!

শাহ মো. সাইফুল ইসলাম : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড উৎপাদনের নামে বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ২১ আগস্ট কোম্পানিটি মালিকানা পরিবর্তন এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উৎপাদনে ফেরার ঘোষণা দেয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কোম্পানিটির এখনো উৎপাদনে ফেরার কোনো খবর নেই।

বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, গত ১৬ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ২৮ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর কোম্পানিটির মালিকানা ও উৎপাদনের খবর ছড়িয়ে শেয়ারটির দাম ৪০ টাকায় তোলা হয়। তখন কোম্পানিটির মালিকানা পরিবর্তন এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উৎপাদন শুরু করার খবর ঘোষণা দেওয়া হয়। এই খবরে কোম্পানিটির শেয়ারদর আরও বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার ৬১ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়। তখন বাজারে গুজব ছড়ানো হয়, উৎপাদন শুরু হলে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১০০ টাকা পেরিয়ে যাবে। যার ফলে বিনিয়োগকারীরা লাভের আশায় কোম্পানিটির শেয়ার কিনেন। কিন্তু এরপর উৎপাদনের কোনো খবর না আসায় কোম্পানিটির শেয়ারদর টানা নিচে নামতে থাকে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ৪০ টাকা ২০ পয়সায় কোম্পানিটির শেয়ারদর ক্লোজিং হয়।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে শেয়ারনিউজের প্রতিনিধি গাজীপুরে কোম্পানিটির কারখানা পরিদর্শন করেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কোম্পানিটির কারখানা আগের মতোই তালাবদ্ধ রয়েছে। উৎপাদন শুরু করার কোনো আলামত দেখা যায়নি।

কোম্পানিটির উৎপাদন শুরুর বিষয়ে সর্বশেষ গত ০৬ অক্টোবর কোম্পানির সচিব ওমর ফারুকের সাথে শেয়ারনিউজ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি জানান, কোম্পানিটি এখনও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) থেকে কোন অর্ডার পায়নি। যার কারণে উৎপাদন শুরু করা যাচ্ছে না। তবে উৎপাদন শুরু করার সকল প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে বলে তিনি জানান। অর্ডার পেলেই উৎপাদন শুরু করা হবে।

এদিকে বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজকে ব্যাগ সরবরাহ করার জন্য দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে হয়। সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর বিসিআইসির ব্যাগ সরবরাহের দরপত্র অনুষ্ঠিত হয়। ওই দরপত্রে কোম্পানিটি তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। বিসিআইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজকে অর্ডার দেওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু তারপরও কোম্পানিটি বিসিআইসির ব্যাগের অর্ডার পেয়ে যাচ্ছে--এমন খবর ছড়িয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল লাগামহীনভাবে বাড়ায় কোম্পানিটির শেয়ারদর। তারপর চড়া দামে সেসব শেয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছে গছিয়ে নিরাপদে তারা সটকে পড়ে।

এরপর যখন অর্ডারটি না পাওয়ার খবর প্রকাশ হতে থাকে, তখন কোম্পানিটির শেয়ারদর টানা কমতে থাকে। সাথে কোম্পানিটির তিন বছরের ‘নো ডিভেন্ডে’ ঘোষণার খবরও যুক্ত হয়। সব মিলিয়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর এখন নিচের দিকে রয়েছে। অন্যদিকে স্বার্থান্বেষী মহল তাদের ফায়দা লুটে বিনিয়োগকারীদের বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ কারসাজিকারীদের শেয়ারটির দাম আকাশে তুলে অর্থ লুটপাট করার সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে। কারণ তারা অর্ডার পাওয়ার আগেই উৎপাদনে ফেরার খবর বাজারে ছড়িয়েছে। কবে থেকে উৎপাদন শুরু করবে তাও নির্দিষ্ট করে বলে দিয়েছে। যার কারণে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছে বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের ঘুমে রেখে নিজেদের ফায়দা লুটে নিয়েছে কারসাজি চক্র ও কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া অর্ডার না পাওয়াতে ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির উৎপাদনে যেতে পারেনি, এই বিষয়েও কোন প্রকার তথ্য জানায়নি বিনিয়োগকারীদের। তাহলে বিসিআইসির অর্ডার না পেলে কোম্পানিটির উৎপাদন শুরু হবে না? যদি তাই হয়, তাহলে বিসিআইসির অর্ডার না পেয়ে উৎপাদনের ঘোষণা দিলো কেন?

শেয়য়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে সুসাশন থাকলে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সাথে এমন আচরণ করার সাহস পেতো না। শেয়ারবাজারে মূলত সুসাশনের অভাব রয়েছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীদের স্বপ্ন দেখিয়ে কারসাজি চক্রের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো। কোম্পানিগুলোর এমন আচরণের বিষয়ে বিএসইসির আরও বেশি নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তাঁরা।

এ বিষেয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম শেয়ারনিউজ-কে বলেন, কোম্পানিটির উৎপাদনে ফেরার খবর একটি সংবেধনশীল তথ্য ছিলো। এমন তথ্য দিয়ে উৎপাদনে না ফেরার বিষয়টি স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে- কেন উৎপাদনে ফিরতে পারেনি। এরপর পরবর্তীতে কমিশন এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু উৎপাদনের খবর দেওয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে, তা বিএসইসি ক্ষতিয়ে দেখবে। উৎপাদনের খবর দিয়ে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কোন প্রকার ইনসাইডার ট্রেডিং হয়েছে কি না, তাও ক্ষতিয়ে দেখা হবে। যদি শেয়ারদর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন প্রকার কারসাজির তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

শেয়ারনিউজ, ১৪ অক্টোবর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে