ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

পাঁচ বছরে আমান কটনের আইপিও অর্থ ব্যয় মাত্র ১০ শতাংশ

২০২৩ সেপ্টেম্বর ২৪ ১৪:০৬:৫৮
পাঁচ বছরে আমান কটনের আইপিও অর্থ ব্যয় মাত্র ১০ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেড ২০১৮ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ৮০ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করেছিল।

আইপিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানিটির কারখানার জন্য নতুন যন্ত্রাংশ ক্রয় ও প্রতিস্থাপন করা এবং ঋণ পরিশোধ ও আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করা। এই অর্থ ব্যয়ে বস্ত্র খাতের কোম্পানিটিকে আইপিও-পরবর্তী এক বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিয়ে দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও ব্যয় সম্পন্ন করতে পারেনি আমান কটন।

সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কোম্পানির আইপিও তহবিলের প্রায় ৯০ শতাংশই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। আর ওই অব্যবহৃত অর্থ তিনটি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করে রেখেছে কোম্পানিটি।

গত আগস্ট শেষে কোম্পানিটির আইপিও তহবিল থেকে মোট ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা উত্তোলিত মোট তহবিলের মাত্র ১০.৩১ শতাংশ। এ সময় পর্যন্ত তহবিলের ৮৯.৬৯ শতাংশ অব্যবহৃত রয়ে গেছে। অব্যবহৃত অর্থের পরিমাণ ৭১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

আইপিও অনুমোদনকালের প্রসপেক্টাস অনুসারে, আমান কটন ফাইব্রাসের উত্তোলিত অর্থ কেবল নতুন যন্ত্রাংশ ক্রয় ও প্রতিস্থাপন এবং ঋণ পরিশোধ ও আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করার কথা ছিল। তখন এই তহবিলের মোট অর্থের মধ্যে ৬৬ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে কোম্পানির নতুন যন্ত্রাংশ ক্রয় ও প্রতিস্থাপনে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়। আর ১০ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে কোম্পানির ঋণ পরিশোধ ও বাকি ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা আইপিও খরচ খাতে ব্যয়ের সিদ্ধান্ত হয়।

কোম্পানির ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ১৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিয়ে প্রথমবারের মতো আইপিও তহবিল ব্যয়ে সময় বাড়ানো হয়। এই সময় তহবিল ব্যবহারের জন্য সময় দুই বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের ৫ আগস্ট করার পাশাপাশি ব্যয় পরিকল্পনায়ও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়।

কোম্পানিটি তার ঋণ পরিশোধে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ৫ কোটি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার ৩৬৫ টাকা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এবং ৪ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ৬৩৫ টাকা ঋণ পরিশোধের জন্য নতুন করে বরাদ্দ নির্ধারণ করে।

এরপর কোম্পানিটি আইপিও তহবিল ব্যবহারের জন্য আরও একবার সময় বাড়িয়েছে। ২০২১ সালে কোম্পানির ১৬তম এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিয়ে এ তহবিল ব্যবহারের সময় ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

সম্প্রতি এই দফার নির্ধাতির সময় শেষ হওয়ায় কোম্পানিটি তহবিল ব্যবহারের জন্য নতুন করে আরও একবার সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই দফায় কোম্পানিটি আইপিও তহবিল ব্যবহারের জন্য ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসন্ন ১৮তম এজিএমে এ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয়া হবে।

সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, গত আগস্ট শেষে আইপিও তহবিল থেকে ঋণ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দকৃত সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবহার সম্পন্ন করেছে কোম্পানিটি। এছাড়া আইপিও খরচ খাতের অর্থ থেকে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যবহার করেছে, যা এ খাতের জন্য বরাদ্দকৃত মোট অর্থের ৯৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

কিন্তু কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত যন্ত্রাংশ ক্রয় ও প্রতিস্থাপন এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের এক টাকাও ব্যয় করেনি।

কোম্পানির নিরীক্ষক জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কোম্পানিটি আগস্টের শেষ দিন পর্যন্ত আইপিও তহবিলের অর্থ ব্যবহার করে কোনো আমদানি কিংবা নির্মাণকাজ করেনি। তবে এই সময় পর্যন্ত কোম্পানিটি তহবিলের অব্যবহৃত অর্থসহ সুদ বাবদ অর্জিত টাকা যোগ করে মোট ৭৩ কোটি টাকা তিনটি ব্যাংকে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করে রেখেছে।

এফডিআর-এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ৩৮ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ১৫ কোটি টাকা এবং কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসিতে ২০ কোটি টাকা এফডিআর করেছে।

আমান কটন ফাইব্রাসের অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ১০০ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারসংখ্যা ১০ কোটি ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকের কাছে ৪৯.৫৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৪.২৫ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ০.১০ শতাংশ এবং বাকি ৩৬.০৭ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে।

কোম্পানির শেয়ারদর গত এক বছরের মধ্যে ২৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩০ টাকা ৯০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করেছে। বর্তমানে কোম্পানির শেয়ার ২৬ টাকা ৫০ পয়সায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে।

কোম্পানিটি ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এখনো ডিভিডেন্ডের ঘোষণা দেয়নি। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। আগের অর্থবছরে ১১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। এর আগে তালিকাভুক্তির পর প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে কোম্পানিটি।

শেয়ারনিউজ, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে