ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

নানা অনিয়ম নিয়ে শেয়ারবাজারে আসছে প্লেসমেন্ট গ্যাংদের অ্যাগ্রো অর্গানিকা

২০২৩ আগস্ট ২৭ ১৭:৫৪:৩৭
নানা অনিয়ম নিয়ে শেয়ারবাজারে আসছে প্লেসমেন্ট গ্যাংদের অ্যাগ্রো অর্গানিকা

শাহ মো. সাইফুল ইসলাম: টাকা না দিয়েই পরিশোধিত মূলধন ও উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বাড়ানোর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসতে চাওয়া অ্যাগ্রো অর্গানিকায় নানা অনিয়ম ও দূর্বলতা উঠে এসেছে। কোম্পানিটির যেমন ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার সক্ষমতা নেই, তেমনি শ্রম আইন ও হিসাব মানসহ নানা অনিয়ম রয়েছে।

দুর্বল এই কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার পেছনে মূল ভূমিকায় কাজ করছে শাহজালাল ইক্যুইটির মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্লেসমেন্ট গ্যাং। যাদের উদ্দেশ্য কোনভাবে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্ত করে শেয়ার বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া।

কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে আনতে ইউনুসুর রহমানের সঙ্গে কাজ করছে ফরিদ ও কাজী সাইফুর রহমানসহ অন্যান্যরা। এরমধ্যে বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে সাইফুর রহমানকে শেয়ারবাজারে নিষিদ্ধ করার শাস্তি দেয় কমিশন। যারা সম্মিলিতভাবে এরইমধ্যে বেশ কিছু কোম্পানিতে প্লেসমেন্ট কারসাজি করেছে।

কোম্পানিটি খসড়া প্রসপেক্টাসের ২৪ পৃষ্ঠায় বাহিরে থেকে নগদ অর্থের উৎসের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ৪৮ লাখ টাকার ঋণ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটিতে ৮ কোটি ১৪ লাখ টাকার স্বল্পমেয়াদি ঋণ রয়েছে। এই ঋণও বাহির থেকে নগদ অর্থের উৎস। এটাকে তারা বাহির থেকে নগদ অর্থের উৎস দেখায়নি।

মূল মার্কেটের ন্যায় এসএমইতে আসা কোম্পানিগুলোরও ডিভিডেন্ড দিতে হয়। বর্তমানে কমিশন সব কোম্পানিকেই অলিখিতভাবে ৩ বছর কমপক্ষে ১০ শতাংশ হারে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে বলছে। কিন্তু অ্যাগ্রো অর্গানিকার সেই অবস্থা নেই। কোম্পানিটির প্রসপেক্টাসে দেখানো ৯ মাসের ব্যবসায় (২০২১-২২ অর্থবছর) শেয়ারপ্রতি পরিচালন ক্যাশ ফ্লো হয়েছে ৫১ পয়সা। অর্থাৎ কোম্পানিটি ৯ মাসে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে।

অ্যাগ্রো অর্গানিকা কর্তৃপক্ষ বিদ্যমান সক্ষমতার অনেকাংশ উৎপাদন ও বাজারজাত করতে পারছে না। তারপরেও সেই কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণে ভবন নির্মাণ, মেশিনারীজ ও ইক্যুপমেন্ট কেনার জন্য শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়াতে চায়। অথচ এই কোম্পানি সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের ব্যবসায় সক্ষমতার ৭০.৬৪ শতাংশ ব্যবহার করতে পেরেছে।

অ্যাগ্রো অর্গানিকা মূলত একটি চাল ব্যবসার কোম্পানি। এই কোম্পানির প্রসপেক্টাসে প্রকাশিত সর্বশেষ ৯ মাসের যে আয়-ব্যয়ের তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে মোট বিক্রির ৩৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার আয় বা বিক্রির মধ্যে চাউল থেকে এসেছে ২৩ কোটি ০৫ লাখ টাকা বা ৬৪ শতাংশ।

হিসাববিদদের মতে, বিএএস-৩৬ অনুযায়ি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ইমপেয়ারম্যান্ট লস হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কোম্পানিগুলো তা না করে সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখায়। এক্ষেত্রে অ্যাগ্রো অর্গানিকাও এর ব্যতিক্রম নয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) করপোরেট গভর্নেন্স ফাইন্যান্সিয়াল বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেকোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে ইমপেয়ারমেন্ট লস হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কোম্পানিগুলো গতানুগতিকভাবে তা না করে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে থাকে।

প্রসপেক্টাসের ২০ পৃষ্ঠা অনুযায়ি, কোম্পানিটিতে জমি ও জমি উন্নয়ন বাবদ ১৪ কোটি ৬২ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। কিন্তু এরমধ্যে জমি উন্নয়ন বাবদ সম্পদ কত টাকার ও জমির পরিমাণ কত, তার কোনো বিস্তারিত তথ্য নেই। অনেকটা তথ্য গোপন করার কারসাজি করেছে অ্যাগ্রো অর্গানিকা।

বিএএস-১৬ অনুযায়ি, ল্যান্ড ডেভোলপমেন্ট অবচয়যোগ্য সম্পদ। এরমধ্যে প্রাচীর, রাস্তা ইত্যাদি সম্পদ থাকে। যেগুলোর নির্দিষ্ট আয়ুস্কাল আছে। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ল্যান্ড ডেভোলপমেন্টের উপর অবচয় চার্জ করে না।

প্রসপেক্টাস অনুযায়ি, অ্যাগ্রো অর্গানিকা প্রিমিয়াম পাওয়ার যোগ্য হলেও শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে শেয়ারবাজারে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি আর্নিংস বেজড ভ্যালু পার শেয়ার পদ্ধতিতে শেয়ারপ্রতি ২১ টাকা ৫৯ পয়সা পাওয়ার যোগ্য বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

দীর্ঘদিনের ব্যবসায় কোম্পানিটির উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা পরিশ্রম করে এই দরের যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে কোম্পানিটি অভিহিত মূল্যে শেয়ার ইস্যু করবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, একটি কোম্পানির সমস্যা থাকলেই কেবল অভিহিত মূল্যে আসতে চায়।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে অ্যাগ্রো অর্গানিকা। নিজেদের স্বার্থে শেয়ারবাজার থেকে যখন টাকা নেওয়ার দরকার পড়েছে, তখনই এই ফান্ড গঠন করেছে।

শ্রম আইন অনুযায়ি, ২০০৬ সাল থেকে নিট আয়ের ৫ শতাংশ হারে ফান্ড গঠন করতে হলেও অ্যাগ্রো অর্গানিকা কর্তৃপক্ষ শেয়ারবাজারে আসাকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে এই ফান্ড গঠন করেছে। এর মাধ্যমে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে অতিরঞ্জিত মুনাফা ও বেশি করে সম্পদ দেখাচ্ছে।

অ্যাগ্রো অর্গানিকা কর্তৃপক্ষ শ্রম আইন ভঙ্গের মাধ্যমে গত ৫ বছরে (২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১) ১ কোটি ৮ লাখ টাকার শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তারা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা বা ইপিএস ৩ পয়সা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৭ লাখ টাকা বা ইপিএস ৪ পয়সা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৪ লাখ টাকা বা ইপিএস ৫ পয়সা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৮ লাখ টাকা বা ইপিএস ৫ পয়সা ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৯ লাখ টাকা বা ইপিএস ৬ পয়সা বেশি দেখিয়েছে।

এদিকে ওই প্রতারণার মাধ্যমে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সম্পদও বেশি দেখিয়েছে। তারা প্রসপেক্টাসে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) দেখিয়েছে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা। এক্ষেত্রে শ্রম আইন ভঙ্গের মাধ্যমে ২৮ পয়সা বেশি দেখানো হয়েছে।

শেয়ারনিউজ, ২৬ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে