ঢাকা, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

‘আমি খুব করে বাঁচতে চেয়েছিলাম…’

২০২৫ নভেম্বর ১২ ১৭:১৫:৫৭
‘আমি খুব করে বাঁচতে চেয়েছিলাম…’

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘আমি খুব করে বাঁচতে চেয়েছি বিশ্বাস করো তোমরা। কিন্তু নিজের সাথে যুদ্ধ করে আর পেরে উঠলাম না।’— বাবা-মায়ের উদ্দেশে লেখা এমন একটি চিরকুট ফেলে না ফেরার দেশে চলে গেলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রী সোনিয়া সুলতানা (২৪)।

বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মির্জাপুর এলাকার ইসলাম টাওয়ারের সপ্তম তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।সোনিয়া রাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ সেশনের (৬৭তম ব্যাচ) ছাত্রী ছিলেন। তাঁর বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, সোনিয়ার ঘর থেকে চারটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিটি চিরকুটে ফুটে উঠেছে তাঁর মানসিক যন্ত্রণা ও পরিবারের প্রতি ভালোবাসা।

একটিতে লেখা ছিল—“আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। আমার যেন পোস্টমর্টেম না করা হয়। আম্মু, আব্বু, ধ্রুবতারা আমি খুব ভালোবাসি। আমাকে ক্ষমা করে দিও। আল্লাহকে বলো আমাকে মাফ করে দিতে।”

অন্য একটিতে লেখা—“আমি প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছি মা। কবরের আযাব কীভাবে সহ্য করব? আব্বুকে বলবা আমার কবরের পাশে থাকতে। আল্লাহ যেন আমাকে মাফ করে দেন।”

তৃতীয় চিরকুটে লেখা ছিল—“আব্বু আম্মু তোমরা আমাকে মাফ করে দিও। তোমাদের জন্য আমি কিচ্ছু করতে পারলাম না। আমার অনেক স্বপ্ন ছিল মা। আমি কিচ্ছু পারলাম না।”

শেষ চিরকুটে সোনিয়া লিখেছেন—“আমি খুব করে বাঁচতে চেয়েছি বিশ্বাস করো তোমরা। কিন্তু নিজের সাথে যুদ্ধ করে আর পেরে উঠলাম না।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন,“বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। পুলিশও কিছু জানাতে পারেনি।”

নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক জানান,“ওড়না গলায় প্যাঁচানো অবস্থায় মরদেহ ঝুলতে দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলেই মনে হয়েছে। সোনিয়া চিরকুটে পোস্টমর্টেম না করার অনুরোধ জানিয়ে গেছে, পরিবারও তাতে রাজি ছিল। তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”

পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা (UD Case) করা হয়েছে।পরিবারের সদস্যরা জানান, সোনিয়া সম্প্রতি মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত ছিলেন। তবে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, তা তারা বুঝে উঠতে পারছেন না। তাঁর মা কেঁদে বলেন,“ও তো আমাদের অনেক ভালোবাসত। ওর এমন করা আমরা বিশ্বাসই করতে পারছি না।”

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব না দিলে এমন ঘটনা বাড়বে। নিয়মিত যোগাযোগ, সহানুভূতি ও মানসিক সহায়তা আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে