ঢাকা, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

লেনদেন কম, আয় কম—এফডিআরের সুদেই ভরসা ডিএসইর

২০২৫ নভেম্বর ০২ ০৯:০০:০৭
লেনদেন কম, আয় কম—এফডিআরের সুদেই ভরসা ডিএসইর

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তাদের মূল কার্যক্রম থেকে বিশাল অঙ্কের পরিচালন লোকসান করেছে। তবে ফিক্সড ইনকাম ইনস্ট্রুমেন্ট ও এফডিআর থেকে প্রাপ্ত অ-পরিচালন আয়ের জোরে তারা লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে মুনাফা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

ডিএসই সূত্র জানায়, লেনদেন ফি, তালিকাভুক্ত কোম্পানির চার্জ, ডেটা বিক্রি, লাইসেন্স ফি ও ট্রেনিং অ্যাকাডেমি থেকে আয়—অর্থাৎ মূল ব্যবসা থেকে প্রায় ৪৯ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। অপরদিকে, প্রায় ১০০ কোটি টাকার এফডিআর ও বন্ড থেকে পাওয়া সুদ এবং ১০ কোটির বেশি ভাড়ার মতো অ-পরিচালন আয়ে প্রতিষ্ঠানের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এ কারণেই ডিএসই চলতি অর্থবছরে প্রায় ৩৩ কোটি টাকার মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে।

যদিও ২০২৪ অর্থবছরে ডিএসইয়ের মুনাফা ছিল ৬১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ফলে চলতি অর্থবছরে তাদের নীট মুনাফা প্রায় ৪৬ শতাংশ কমেছে।

ডিএসইয়ের পরিচালনা পর্ষদ গত সপ্তাহে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আর্থিক ফলাফল অনুমোদন করেছে। সেখানে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১৮ পয়সা দেখানো হয়েছে এবং শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২ শতাংশের কম ক্যাশ ডিভিডেন্ড সুপারিশ করা হয়েছে।

পরিচালকরা ও কর্মকর্তারা এ লোকসানের কারণ হিসেবে ২০২৪ সালের আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন। তাদের মতে, বাজারে লেনদেন কমে যাওয়ায় ডিএসইয়ের প্রধান আয় উৎসে বড় ধাক্কা লেগেছে।

ডিএসই বোর্ডের এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “রাজনৈতিক পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পুনর্গঠনের কারণে শেয়ারবাজারে বড় অস্থিরতা তৈরি হয়। এতে লেনদেন সীমিত হয়ে পড়ে এবং লেনদেন ফি থেকে আয় কমে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “পরিচালন আয় কমলেও এফডিআর থেকে পাওয়া সুদ বেড়ে অর্থবছর ২০২৪-এর ৭৭ কোটি টাকা থেকে ২০২৫ অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এই অ-পরিচালন আয়ের কারণেই ডিএসই মুনাফা দেখাতে পেরেছে।”

ডিএসইয়ের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় দাঁড়ায় ১০০ কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী বছরের ১২৭ কোটি টাকার তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম। পরিচালন ব্যয়, অবচয় ও অ্যামোর্টাইজেশন হিসাবের পর লোকসান দাঁড়ায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ২০২৪ অর্থবছরে মূল কার্যক্রমে লোকসান ছিল ২০ কোটি ৫১ লাখ টাকা, কিন্তু এফডিআর আয়ের কারণে সেটি ৬১ কোটি টাকার মুনাফায় পরিণত হয়।

জুন ২০২৪ শেষে ডিএসইয়ের এফডিআর ও বন্ডে মোট বিনিয়োগ ছিল ৮৩২ কোটি টাকা, যার মধ্যে মার্চেন্টাইল ব্যাংকে সর্বাধিক ১৩৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা (১৬.৭৩%) রয়েছে। এছাড়া ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৯১ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংকে ৮৫ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংকে ৮২ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। ডিএসই আরও বিনিয়োগ করেছে একীকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংকগুলোতে—এক্সিম ব্যাংকে ৩৮ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংকে ১৮ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ১০ কোটি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ৪ কোটি টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা, যা ১৮০ কোটি ৩৮ লাখ শেয়ারে বিভক্ত। বর্তমানে ডিএসইয়ের শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে রয়েছে ব্রোকারেজ হাউসগুলো এবং কৌশলগত অংশীদার শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ (SZSE) ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ (SSE)-এর যৌথ কনসোর্টিয়াম। ব্রোকাররা প্রায় ৪০ শতাংশ, চীনা কনসোর্টিয়াম ২৫ শতাংশ, এবং বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার ব্লকে রয়েছে যা ভবিষ্যতে আইপিওর মাধ্যমে বিক্রি করা হবে।

২০২৫ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ২ শতাংশের কম ডিভিডেন্ড ২০১৬-১৭ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন। ২০১৬-১৭ সালে ডিএসই ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে তা কমে আসে—২০২২ সালে ৬ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৪ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে ৩.৩ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে বাজারে চরম অস্থিরতা ছিল। ১ জুলাই ২০২৪ থেকে ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত ২৩৫ কর্মদিবস লেনদেন হয়েছে। এই সময়ে মোট টার্নওভার ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ কম। গড় দৈনিক টার্নওভার ছিল ৪৭২ কোটি টাকা, আর ডিএসইএক্স সূচক ৫ হাজার ৩২৮ পয়েন্ট থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৩৮ পয়েন্টে।

তহা/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে