ঢাকা, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

যে কারণে ঢাকায় জাতিসংঘের অফিস ঘিরে তীব্র বিতর্ক

২০২৫ জুলাই ২০ ১১:৪৪:৫৩
যে কারণে ঢাকায় জাতিসংঘের অফিস ঘিরে তীব্র বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের (OHCHR) কাজ হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন প্রকাশ। তারা নির্যাতন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, নারী ও শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এই সংস্থা দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করে নীতি ও প্রশিক্ষণে সহায়তা দিতে, যাতে মানবাধিকার পরিস্থিতির টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয়। OHCHR-এর প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে অনেক সময় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিদেশি সাহায্য ও বিনিয়োগের ধারা নির্ধারিত হয়।

বিশ্বজুড়ে OHCHR-এর ১৬টি দেশীয় অফিস আছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকায় এর উপস্থিতি বেশি। দক্ষিণ এশিয়ায় এটাই হবে প্রথম স্থায়ী অফিস। এর আগে OHCHR বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে প্রতিনিধিদল পাঠালেও এবার স্থায়ী ভিত্তিতে তারা কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। অতীতে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, রাজনৈতিক নিপীড়নের ঘটনায় বহু আন্তর্জাতিক সমালোচনা এসেছে, যার নিরপেক্ষ তদন্তের সুযোগ সীমিত ছিল। মানবাধিকার কর্মীরা মনে করছেন, এ অফিস সেই ঘাটতি পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন এই অফিস চালুর বিরোধিতা করছে। তারা বলছে, এই অফিসের কার্যক্রমের মাধ্যমে মুসলিম পারিবারিক আইন, ইসলামি শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপ হতে পারে। তাদের দাবি, OHCHR পশ্চিমা বিশ্বের সংস্কৃতি ও সমাজব্যবস্থাকে মানবাধিকারের নামে আরোপ করতে চায়। তারা LGBT বিষয়ক জাতিসংঘের অবস্থান নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, “শিশু অধিকার, নারী নির্যাতন বা বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্তের ক্ষেত্রে এই অফিস বাস্তব সহায়তা দিতে পারবে।” তিনি আরও বলেন, যারা আপত্তি জানাচ্ছে তারা অনেক সময় ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে ভীতি ছড়াচ্ছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশসহ বহু মুসলিম দেশই সদস্য হিসেবে কাজ করে।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, “যদি সরকার এই উদ্যোগকে আন্তরিকভাবে বাস্তবায়ন করে, তবে অতীতে যে বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ঘটেছে, সেগুলোর তদন্তের একটি নিরপেক্ষ কাঠামো তৈরি হতে পারে।”

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের অফিস চালু হওয়া বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে, যদি সেটি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এবং দেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান জানিয়ে পরিচালিত হয়। যদিও ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তবুও মানবাধিকার পরিস্থিতির টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

মুয়াজ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে